স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী:
মানুষ বিপদে পড়লে বিচারের আশায় সংশ্লিষ্ট থানায় উপস্থিত হন। আবার অনেক সময় মারামারির ঘটনায় কেউ আহত হলে বা রক্তাক্ত জখম হলে প্রমাণ রাখতেও অনেকে প্রথমে হাসপাতালে না গিয়ে থানায় আসেন অভিযোগ জানাতে।
কিন্তু এবার মানুষ নয় পায়ে ক্ষত নিয়ে একটি ঘোড়া হাজির হলো থানায়। তাও আবার গেটে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে সরাসরি ডিউটি অফিসারের রুমের সামনে গিয়ে হাজির। অবিশ্বাস্য ও বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল থানায়। কিন্তু কেন? কেউ বলছেন বিচারের দাবিতে আবার অনেকে বলছেন চিকিৎসার জন্য। বিষয়টি গোটা জেলায় বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার (৪ মার্চ) জুম্মার নামাজের পর। থানার মূল গেটের পাশে দাঁড়ানো ডিউটিরত কনস্টেবল দেখতে পান একটি ঘোড়া হাটতে হাটতে থানা কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রবেশ করছে। স্বাভাবিক কারণে মনে করছেন যে, ঘাস খেতে হয়তো যাচ্ছে। কিন্তু না, সোজা থানার মধ্যে যখন যেতে শুরু করলো ঘোড়াটি, তখন কনস্টেবল তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এরপর সরাসরি ডিউটি অফিসারের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঘোড়াটি। এর আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সকালেও একবার আসছিল ঘোড়াটি কিন্তু তখন পুলিশ সদস্যরা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল বলে জানান বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন।
থানার ডিউটি কর্মকর্তা উপ পুলিশ পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, ঘোড়াটি তাড়ানোর চেষ্টা করেও যখন সরছে না, তখন লক্ষ্য করলাম ঘোড়ার পিছনের বাম পা দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আহত কোনো মানুষ থানায় আসলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাতে হয়। সে অনুযায়ী জরুরি অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত উপ পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুস সবুরকে জানালে তিনি থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান স্যারকে অবহিত করেন। এরপর মিজানুর রহমান স্যার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন স্যারকে জানালে ওসি স্যার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘোড়াটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
আব্দুস সবুর জানান, ওসি স্যারের নির্দেশ পেয়ে বাউফল উপজেলার প্রাক্তন প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসককে বাসা থেকে ডেকে থানায় নিয়ে আসি এবং তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পর নিজ উদ্যোগে ঘোড়াটি থানা কমপ্লেক্স ত্যাগ করে।
চিকিৎসক আবদুল আজিজ জানান, ঘোড়াটির বাম পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। ক্ষত দেখে মনে হয়েছে ধারালো কোনো কিছুর আঘাত লেগেছিল, যার কারণে পায়ের চামড়া উঠে মাংসে ক্ষত হয়েছে। এরপর ঘোড়াটির ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে ব্যথা নাশক ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ওষুধ লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সুস্থ মনে করলে নিজেই বেরিয়ে যায়। ড্রেসিংয়ের সময় কোনো মানুষও এভাবে হয়তো স্থির হয়ে থাকতে পারতো না বলে জানান চিকিৎসক আবদুল আজিজ।
বাউফল থানার ওসি আল মামুন জানান, এটি একটি বিরল ঘটনা। প্রথমে যখন বৃহস্পতিবার এসেছিল মনে করেছিলাম ঘাস খেতে এসে হয়তো থানা কমপ্লেক্সের মধ্যে মূল ভবনের সামনে দাঁড়িয়েছিল। তখন অন্যান্য পুলিশ ভাই ঘোড়াটি তাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন জুমার নামাজের পর যখন দেখলাম সেই ঘোড়াটি আবার আসছে তখন আমার মনে খটকা লেগেছে। আমি দুষ্টুমির ছলে কয়েকজনকে বলেছিলাম দেখছো বিচার চাইতে ঘোড়াও থানায় আসে।
ওসি আরও জানান, কিন্তু আমার অফিসাররা যখন বলছে ঘোড়াটির পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে তখন আমার খারাপ লেগেছে। আমি তাৎক্ষনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ঘোড়াটির মালিক খুঁজে বের করতে পারেনি তবে অনেকে বলছে এটি দশমিনা উপজেলার কোনো এক জনপ্রতিনিধির হবে হয়তো। তাছাড়া মালিক পক্ষের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ওসি আল মামুন আরও বলেন, একটি ঘোড়া আহত হয়ে থানায় এসেছে চিকিৎসা সেবা নিতে, যা আমাদের পুলিশ সদস্যদের মুগ্ধ করেছে। এমন ঘটনা আমার কাছে বিরল মনে হয়েছে। ঘোড়াটির যথাযথ সেবা দিতে পেরে আমাদের কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
/এনএএস
Leave a reply