প্রভাবশালী ঠিকাদার কর্তৃক দুই প্রকৌশলীকে মারধর, মামলা দায়ের

|

অভিযুক্ত ঠিকাদার গোলাম সরোয়ার বাদলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী:

পটুয়াখালীর প্রভাবশালী ঠিকাদার গোলাম সরোয়ার বাদলের বিরুদ্ধে সরকারি অফিসে প্রবেশ করে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ দুইজন কর্মকর্তাকে মারধর করে সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে পটুয়াখালীর দুমকী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোববার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুমকী থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুস সালাম।
রোববার দুপুরের এ ঘটনায় মামলায় আসামি করা হয়েছে পটুয়াখালী মেসার্স পল্লী ট্রেডার্স এর মালিক গোলাম সরোয়ার বাদল। তিনি স্থানীয়ভাবে মেয়র বাদল নামে পরিচিত।

মামলার বাদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নাজিম উদ্দীন জানান, পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়রের স্নেহধন্য গোলাম সরোয়ার বাদল ওরফে মেয়র বাদল রোববার দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে আমার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সালামের সঙ্গে পুরোনো একটি বিল নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও তাকে মারধোর করে আমার অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি বিল নিয়ে কথা বলতে চাইলে আমি পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করার
পরামর্শ দেই।

এসময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমার টেবিলের উপরে রাখা গ্লাসভর্তি পানি আমার মুখে ছুড়ে মারেন। এক পর্যায়ে চেয়ার ছুড়ে ফেলে আমার বাম গালে চড়থাপ্পড় মারেন। এসময় তিনি তার কোমরে থাকা পিস্তল দেখিয়ে আমাদের ভয়-ভীতি দেখান।

এসময় তার ডাকাডাকিতে উপজেলা পরিষদের অন্যান্য লোকজন এসে তাকে নিবৃত করেন। তিনি চলে যাওয়ার সময় তার সাথে থাকা পিস্তল দেখিয়ে বলে যান, আজকের মধ্যে বিল না দিলে তোদেরকে দেখে নিবো। বাদল চলে যাবার পর আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছি।

মামলার স্বাক্ষী এবং মারধোরের শিকার একই অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সালাম বলেন, ২০১৬ সালে গোলাম সরোয়ার বাদল দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়ার একটি ব্রিজ নির্মাণ করেন। কাজ শেষ হলেও র্নিমাণাধীন ব্রীজে নানা ত্রুটি থাকায় কাজের অনুকূলে অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু ঠিকাদার বাদল রোববার আমার কাছে এসে শতভাগ বিল দাবি করেন। তার দাবির বিপরীতে আমি আপত্তি জানিয়ে বলি, উল্লেখিত প্রকল্পে যৌথ মেজারমেন্ট করে বাকি বিল পরিশোধ করা হবে। আপনি চাইলেই আমি বিল দিতে পারিনা। এতে ঠিকাদার বাদল রাগান্বিত হয়ে আমাকে চড়থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। পরে তিনি উপজেলা প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়েও একই কাণ্ড ঘটান।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পটুয়াখালী ন্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম শাহাবুদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার আসামি গোলাম সরোয়ার বাদল সাংবাদিকদের জানান, পুরোনো একটি বিল নিয়ে এলজিইডি টালবাহানা শুরু করে। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর-রশিদ মধ্যস্ততা করেন
এবং বিল দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে দুমকী উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আ. সালাম ১০ লাখ টাকা দাবি করলে আমি ধারদেনা করে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা সালামকে প্রদান করি। কিন্তু সালাম ওই টাকা হাতে নিয়ে বাকি টাকা দাবি করে বিল দিতে অস্বীকার করলে আমি তার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হই। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কিছু হয়নি।

অপরদিকে, দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর-রশিদ হাওলাদার জানান, ঘটনার সময় আমি অফিসে ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর এলজিইডির লোকজন আমাকে এসে বিষয়টি অবহিত করলেও আমি গিয়ে ঠিকাদার বাদলকে সেখানে পাইনি। কিন্তু এঘটনাটি উপজেলা পরিষদের নয়, এটা জেলা অফিসের। তবুও অনাকাঙ্খিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।

দুমকী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুস সালাম জানান. পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply