নো ফ্লাই জোন কী, ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করতে ন্যাটোর বাধা কোথায়?

|

ছবি: সংগৃহীত

রুশ আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি বারবারই আহ্বান জানিয়ে আসছেন ভোলদিমের জেলেনস্কি। ইউক্রেনকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণার জন্য ন্যাটোর প্রতি ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করলেও সেই আবেদন নাকচ হয়ে যায়। রুশ হামলার বিপক্ষে পরিষ্কার অবস্থান নেয়া সত্ত্বেও কেন পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের আবেদন রক্ষা করতে পারছে না?

নো-ফ্লাই-জোন হচ্ছে এমন একটি এলাকা যেখানে সাধারণত নিরাপত্তার কারণে বিমানের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হয়। যে অঞ্চলে যুদ্ধ চলে সেখানে আকাশপথ ব্যবহার করে আক্রমণকারীকে নিজ ভূমিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধাদানের জন্যই এই ব্যবস্থাটি নেয়া হয়ে থাকে। নো ফ্লাই জোন ব্যবস্থাটি বেসামরিক ব্যক্তি বা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা প্রতিরোধ করে; পাশাপাশি আকাশে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্তের কাজেও লাগে। নিয়ম ভঙ্গকারী বিমানের সন্ধানে সেই অঞ্চলের যুদ্ধবিমান নো ফ্লাই জোনে টহল দিয়ে থাকে।

এই ব্যবস্থায় দুর্বৃত্ত বা অনুপ্রবেশকারী বিমানকে অবতরণ করতে বাধ্য করা হতে পারে বা এসকর্ট করে নো ফ্লাই জোনের সীমানার বাইরে বের করে দিয়ে আসা হয়। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়; অনুপ্রবেশকারী বিমানকে গুলি করে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে।   

অলিম্পিকের মতো বড় ইভেন্ট বা নির্দিষ্ট কিছু ভবনের জন্যও নো-ফ্লাই জোন ব্যবহার করা যেতে পারে। চলতি বছর উইন্ডসর ক্যাসলের চারপাশে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছিল, যাতে রাজপ্রাসাদের কাছে বিমানের গতিবিধি সীমিত করা যায়।

 

ছবি: সংগৃহীত

 

ন্যাটো কর্তৃক ইউক্রেনের ওপর নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে, ন্যাটো বাহিনী সেই আকাশে দেখা যেকোনো রুশ বিমানের সাথে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব। তবে তাদের প্রতি জানানো ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কির নো ফ্লাই জোনের আবেদন রাখতে পারছে না ন্যাটো। সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা যেন না হয়, সেজন্য ইউক্রেনের ওপর নো ফ্লাই জোন আরোপ করা হবে না; বেশ কয়েকবারই এমন বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজুসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো।

ছবি: সংগৃহীত

ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টলটেনবার্গ ২৮ ফেব্রুয়ারি এনবিসিকে বলেন, ইউক্রেনে যাওয়ার কোনো ধরনের ইচ্ছে আমাদের নেই, স্থল বা আকাশপথ, কোনোভাবেই না। আমরা এই যুদ্ধের কোনো অংশ নই।

স্টলটেনবার্গ ৫ মার্চ বলেন, ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন আরোপ করা মানে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া। ন্যাটোর মিত্র হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে এই যুদ্ধকে ইউক্রেনের বাইরে বাড়তে না দেয়া, কারণ সেটি আরও বেশি বিপজ্জনক, আরও বিধ্বংসী এবং আরও বেশি মানুষের দুর্ভোগের কারণ হবে।

ইউক্রেনকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হলে রুশ বিমানের সাথে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে অন্যান্য দেশের যুদ্ধবিমান, এতে এক পর্যায়ে গুলি বর্ষণে বাধ্য হবে একটি পক্ষ। ফলশ্রুতিতে, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, যা চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

ছবি: সংগৃহীত

গত ১ মার্চ বরিস জনসনের একটি সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসিক্ত অবস্থায় দারিয়া কালেনিউক নামের ইউক্রেনীয় এক সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, কেন ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হচ্ছে না যেখানে ইউক্রেনের বেসামরিক মানুষ, অগণিত নারী ও শিশুরা রুশ বোমা ও মিসাইলের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সেই প্রশ্নের জবাবে বলেন, খুব সম্ভবত এটা আমরা করতে পারি না। আমার ধারণা, তেমন কিছু ঘটে গেলে তার ফলাফল চলে যাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।\

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস বিবিসি রেডিওতে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা কোনো ইউরোপীয় যুদ্ধ ডেকে আনতে পারি না। কিন্তু ইউক্রেনকে সাহায্য করতে পারি আমরা। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামাদির জোগান দিয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাবো আমরা।

ইউক্রেনে কেন নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হবে না, সে ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, সেক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে শুরু হয়ে যাবে সরাসরি যুদ্ধ।

আরও পড়ুন: কিয়েভসহ ৪ শহরে রাশিয়ার অস্ত্রবিরতি

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply