রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ব বাজার। ১৪ বছর পর গত সোমবার (৭ মার্চ) ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ১৩৯ ডলার। এছাড়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হু হু করে বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাস, খাদ্যপণ্য আর স্বর্ণের দাম। যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব দেখছে পুঁজিবাজার। তবে, এখনো রুশ জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের কারণে পিছিয়ে গেছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ।
মার্কিন ফিলিং স্টেশনগুলোয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে সোমবার গ্যালন প্রতি গ্যাসের দাম বাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত, যা ২০০৮ সালের জুলাই মাসের পর সর্বোচ্চ। এছাড়াও টালমাটাল ছিল জ্বালানি তেলের বাজারও। সে কারণেই রাশিয়া থেকে আমদানির ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে ভাবছে বাইডেন প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো ঘোষণা দেননি প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে বিকল্প পথের সন্ধানে ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে চলছে আলোচনা। কারণ, পুতিন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তেল-গ্যাসের ওপর যেন চাপ না বাড়ে সেটাও দেখা হচ্ছে। মার্কিনীদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখা হবে জ্বালানির মূল্য।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্ব বাজারে ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলারে বিক্রি হয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। দিনের শুরুতে এর মূল্য ছিল ১৪৭ ডলার। ইউরোপের বাজারে গ্যাসের মূল্য সূচকও ছিল ৭৯ শতাংশ বেশি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ওপেক। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির মহাসচিব মোহাম্মদ বারকিনদো বলেন, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে, তা ওপেকের নিয়ন্ত্রণে নেই। প্রত্যাশা করছি, খুব শিগগিরই বিশ্ব নেতারা শান্তি প্রণয়নে ভূমিকা রাখবেন। যার ফলে শান্ত হয়ে আসবে বাজার। করোনা মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সাল থেকেই ভারসাম্যহীন বৈশ্বিক অর্থনীতি। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ দুই জ্বালানি উৎপাদক দেশ রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে পিছিয়ে গেল সেটি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া।
বিশ্লেষকদের অভিমত অনুসারে, এখনই লাগাম না টানলে ব্যারেল প্রতি দাম ছাড়াবে ৩০০ ডলার। কারণ, গোটা বিশ্বের বিরুদ্ধে জ্বালানি রাজনীতিতে নেমেছে রাশিয়া। ফিউচার্স ডিভিশনের নির্বাহী পরিচালক বব ইয়োগের বলেন, ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য ১২৫ থেকে ১৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। রাশিয়ার ওপর হুমকি- নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে সেটি ৩০০ ডলারও ছাড়াতে পারে। মূলতঃ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চাপে পড়ছে পশ্চিমারাই। কারণ, দেশটি বর্তমানে ইউরোপ এবং মার্কিন মূলুকের সাথে জ্বালানি রাজনীতি করছে। কারণ, বাণিজ্যের জন্য তাদের সামনে ঝুঁকতেই হবে।
গেল ১০ বছরের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, এমন তথ্য জানিয়েছে বৈশ্বিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড়ে ১৪০ এর বেশি ওঠে মূল্য সূচক। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: গ্যাস দেবে না রাশিয়া, বিকল্প খুঁজছে ইইউ
এম ই/
Leave a reply