নারী দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে দেরি হওয়ায় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলির বিরুদ্ধে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে এ সংক্রান্ত একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সকাল ১১ টার দিকে নারী দিবসের এক আলোচনা সভায় এমন অভিযোগ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহান। এ সময় ওই সংসদ সদস্যের সঙ্গে
কথোপকথনের একটি ফোনকল রেকর্ড সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেন তিনি। কল রেকর্ডের প্রথম দিকে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়ার বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পাবনা সদর উপজেলা নারী ভাইস- চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার রেখা। এসময় তার পাশে থাকা সাংসদ নাদিরা ইয়াসমিন জলি ফোন নিয়ে কানিজ আইরিন জাহানকে ধমকাতে থাকেন।
অডিওতে নারী কর্মকর্তার উদ্দেশে জলিকে বলতে শোনা যায়, এই আপনি কী হইছেন, আপনি নারী হয়ে নারীদের সম্মান করেন না! আপনাকে এক থাপ্পড় মেরে পাবনা ছাড়া করবো কিন্তু। আপনার খুব বেশি স্পর্ধা হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা মেয়ের সঙ্গে আপনি খারাপ ব্যবহার করেন। এই লিজ দিসি আপনাকে না? লিজ দিসি নাহ? ফাউল মহিলা কোথাকার! সবকিছু নিয়ে
দুর্নীতির মধ্যে আপনি নিজেকে জড়াচ্ছেন, আপনি একটা অফিসার হয়ে। ফাউল মহিলা কোথাকার! বেশি সাহস হয়ে গেছে আপনার নাহ? আমি পাবনায় প্রেজেন্ট রইছি, প্রোগ্রাম করবেন, কালকে নারী দিবস। আপনাকে বলে দিতে হবে? আপনি (আমাকে) ইনভাইট করবেন কালকে নাহ? ফাউল মহিলা। আপনি কর্মকর্তা, আপনাকে এমপির বাসায় আসতে হবে, এসে দাওয়াত করতে হবে। আর কালকে যদি আমি প্রোগ্রামে দাওয়াত না পাই তাহলে আপনাকে আমি কেমনে করে পাবনা ছাড়া করি তার ব্যবস্থা আমি করবো, আপনাকে পাবনা ছাড়া করা ১০ মিনিটের ব্যাপার।
সভায় কানিজ আইরিন জাহান বলেন, আমাদের জেলার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি জনাব নাদিরা ইয়াসমিন জলি যিনি আজকের প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সোমবার (৭ মার্চ) ১১টার দিকে ৭ মার্চের প্রোগ্রাম শেষ করে যখন আমি বাসায় যাই তখন তিনি হঠাৎ করেই আমাকে ফোন করে বলেন যে- এই আপনি আমাকে দাওয়াত করেন নাই কেন? আপনি কী হইছেন? আপনি ফালতু মহিলা। এক থাপ্পড় দিয়ে আপনাকে আমি পাবনা ছাড়া করবো! নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তার প্রশ্ন তুলে ধরে তিনি বলেন, তাহলে নারী দিবস কেন আমরা উদযাপন করবো? কতটুকু সম্মান আমাদের আছে? যে উনি (এমপি) আমাকে থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করবেন! আমি এখানে বাড়ির কাজ করতে এসেছি? সরকারই আমাকে বসিয়েছে। সরকারেরই একটা পদে আমি আছি। আমাকে যখন এভাবে বলা হয়েছে আমি মানসিকভাবে অনেক আহত হয়েছি। আমার ৫৫ বছরের জীবনে আমি এভাবে কথা শুনিনি। একজন সরকারি নারী কর্মকর্তার সাথে একজন নারী এমপি যদি এমন ব্যবহার করেন তাহলে এই নারী দিবস পালন করে কী হবে আমাদের?
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে কল রেকর্ডটা আছে, আমি সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি, কারণ আমার মোবাইলে অটোরেকর্ড হয়। আমি আমাদের এমডি স্যারকেও বলেছি। আমাকে উনি (এমপি) কাজের জন্য একশবার বকতে পারেন, হাজারবার বকতে পারেন কিন্তু থাপ্পড় দেয়ার কথা উনি বলতে পারেন না।
তবে ফোনে কথোপকথনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নারী সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি। তিনি বলেন, আমি ওই নারী কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু আমার ফোন উনি রিসিভ করেননি। সামাজিক মাধ্যমে যেটি ভাইরাল হয়েছে, সেই ফোন নম্বরটিও আমার নয়, কণ্ঠও আমার নয়। উনি কোন ফোনে কার সাথে কথা বলেছেন, তা আমি জানি না।
সাংসদ নাদিরা ইয়াসমিন জলি অভিযোগ করে বলেন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহান একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এর আগের জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদও তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। খুবই শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সাংসদ নাদিরা ইয়াসমিন জলি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই ওই ফোনালাপটি বানিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে বলে দাবি তার।
সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ফোনালাপের প্রতিবাদে প্রতিবাদ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
/এসএইচ
Leave a reply