চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষে চরম মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে ইউক্রেন। এই সংঘর্ষে শুধু ইউক্রেনের সেনারাই না নিহত হয়েছেন অনেক রাশিয়ান সেনাও। অনেকের মরদেহ পৌঁছেছে স্বজনদের কাছে আবার অনেকের কোনো খোঁজই পাইনি পরিবার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহের বেশি সময় থেকে নাতি নিকিতার কোনো খোঁজ পান না দাদি মারিনা (ছদ্মনাম)। শেষবার নিকিতা ফোনে জানিয়েছিলেন, তাকে বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। তারপর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ। নিকিতা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ পাওয়া যোদ্ধা।
মারিনা জানান, নিকিতা বাহিনীতে যোগ দেয়ার কয়েক দিন পরই তার সামরিক ইউনিটের প্রতিনিধিরা এলাকায় এসেছিলেন। তারা চাইছিলেন, নতুন যোগ দেয়াদের সময়সীমা বাড়িয়ে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক করতে। তারা ওকে রাজি করিয়ে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, তুমি আগেভাগে অবসরে যেতে পারবে, নির্ভরযোগ্য বেতন থাকবে তোমার, গাড়ি চালাতে শিখবে।
মারিনা আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে গাড়ি চালানোর কাজ পান নিকিতা। মাসে ১৮ হাজার রুবল দেয়া হতো। রুবলের দরপতনের আগে তা দিয়ে রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো রকমে টিকে থাকা সম্ভব হতো শুধু। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে নাতির কোনো ধারণাই ছিল না যে তাকে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে। ‘ও বলেছিল, অনুশীলন করতে হবে। এরপর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ‘ ঠিক একই ধরনের কথা বলেছেন অন্য অনেক রুশ সেনার আত্মীয়রাও।
এরকম অভিযোগ করেছেন আরও অনেকেই। নিকোলি নামে এক সেনার মা অভিযোগ করেন, আমার সন্তানকে এক প্রকার জোর করেই ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না এখন আমি কোথায় অভিযোগ করবো। কার কাছে যাব।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই বাধ্যতামূলক নিয়োগের যোদ্ধা। এদের অনেকেরই বিশ্বাস ছিল, তাদের শুধু অনুশীলন করানো হবে। এর বদলে তাদের পাঠানো হয়েছে যুদ্ধে। নিকিতার মতো ঘটনা ঘটেছে অন্যদের সাথেও।
ঠিক একই ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন অন্যান্য রুশ চুক্তিভিত্তিক সেনার মায়েরাও। এই সেনাদেরও ‘অনুশীলনের’ জন্য পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তারা। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বর্তমানে ‘লুক ফর ইওর ওন’ বা ‘স্বজনকে খুঁজুন’ নামের এক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে রাশিয়ার যুদ্ধবন্দি ও আহতদের ছবি প্রকাশ করে উদ্বিগ্ন আত্মীয়দের যোগাযোগের আহ্বান করা হচ্ছে।
/এনএএস
Leave a reply