পুরস্কার যত কম প্রশ্ন আক্রান্ত হয় ততই মঙ্গল জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছেন, স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো একটা সম্মানজনক পুরস্কার প্রশ্ন আক্রান্ত না হওয়া মঙ্গল। স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ এর সংশোধিত তালিকার বিষয়ে যমুনা নিউজের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে আমির হামজার নাম বাদ
দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ এর তালিকা থেকে মরহম মো. আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে শুক্রবার (১৮ মার্চ) সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান স্বাক্ষরিত সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
সংশোধিত তালিকায় মনোনীত ব্যক্তির নাম বাদ পড়া প্রসঙ্গে নূরুল হুদা বলেন, নীতিমালা ও তথ্য ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না। বিশেষ করে, যারা কম পরিচিত বা কম জনপ্রিয় তাদের ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র বিখ্যাত কিংবা ঢাকায় বসবাস করেন, এমন লেখকরাই পুরস্কার পাবেন তা নয়। কম পরিচিতদের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করেই পুরস্কার ঘোষণা করা উচিত।
সাহিত্য পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রেই কেন এমন বারবার ঘটছে? প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির এ মহাপরিচালকের জবাব, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য, পুরস্কার তাদেরকেই দেয়া উচিত। আমার মনে হয়েছে, যারা সাহিত্য চর্চা করেন, সাহিত্য পুরস্কার তাদেরকেই দেয়া উচিত। আর বিশেষ করে মরণোত্তর পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে অপরিচিত লেখক যারা আছেন, তাদের ব্যাপারে বিশেষ করে সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: ‘আমির হামজা’ কে?
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ এর জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, এ বছর ১০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারটি দেয়া হচ্ছে। তবে, সমালোচনার মুখে শুক্রবার সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে আমির হামজার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
১৫ মার্চ প্রকাশিত মনোনীতদের তালিকায় আমির হামজার নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। দেশের সাহিত্য অঙ্গনের বেশিরভাগেই তাকে চিনতে পারছিলেন না। খুঁজেও পাচ্ছিলেন না তার উল্লেখযোগ্য কোনো সাহিত্যকর্ম। তখন যমুনা নিউজ সাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলে। আমির হামজা সম্পর্কে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা জানিয়েছিলেন, তিনি তাকে চেনেন না। বলেছিলেন, আমি তার সম্পর্কে জানি না। হয়তো এমনও হতে পারে তিনি নিভৃতচারী কোনো লেখক। অনেক নিভৃতচারী পল্লি সাহিত্যিক থাকেন যাদের সেভাবে কেউ চেনে না। তবে আমি ওনাকে চিনি না, এ কথা বলতে দ্বিধা নেই।
লেখক আহমাদ মাযহারের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল আমির হামজার প্রসঙ্গে। তিনিও তাৎক্ষণিক তার সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। তার মতে, হয়তো এমনও হতে পারে, আমির হামজা অনেক কাজই করেছেন সেগুলো প্রচার পায়নি। তবে আমাদের দেশের পুরস্কার দেয়ার পদ্ধতিতে নানা ত্রুটি আছে। রাষ্ট্র এখনও পরিপক্ক না, এর প্রভাব পুরস্কারগুলোতেও দেখা যায়। বিশেষ করে যে সকল পুরস্কার আমলারা নির্ধারণ করেন সেখানে সৃষ্টিশীলতার চেয়ে ব্যক্তির পরিচয়, যোগাযোগ অনেক মুখ্য হয়ে উঠে। মাঝে মাঝে কিছু গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করে এসকল পুরস্কারকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়। আবার লেখকদের অনেককেই আমি দেখি পুরস্কারের জন্য কাঙাল হয়ে থাকেন অথবা জবরদস্তি করে পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করেন।
এছাড়া গত কয়েকদিনে আমির হামজার সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তার নাম বাদ দিয়েছে।
সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আব্দুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস (মরণোত্তর) ও সিরাজুল হক (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম পাচ্ছেন এ পুরস্কার। আর স্থাপত্যে স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনকে (মরণোত্তর) এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, অসামান্য আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের জন্য যারা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জনকল্যাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাদের সম্মান জানাতে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পাবেন ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পাঁচ লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র।
/এমএন
Leave a reply