ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ‘বোঝা কমানোর’ যুক্তিতে বন্ধ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিট। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের এ পরীক্ষা তুলে দিয়ে নতুন কৌশলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের। যদিও এর বিরোধিতা করছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ জানিয়েছেন, ঘ ইউনিটের প্রয়োজন আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে না। বিপরীতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, হঠাৎ করে এমন কী ঘটনা ঘটলো, চার দশক ধরে চলে আসা পরীক্ষা পদ্ধতি হুট করে বদলে ফেলবো।
বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের থাকা, না থাকা নিয়ে। গত রোববার (২৭ মার্চ) সবশেষ সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে আর থাকবে না বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট। বাকি চারটি ইউনিট যথাক্রমে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট; বিজ্ঞান ইউনিট; ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট এবং চারুকলা ইউনিট থাকবে নতুন নাম নিয়ে।
বাকি ইউনিটগুলো থাকলেও কেনো থাকছে না ঘ ইউনিট, এমন প্রশ্নের জবাবে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন মত।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও পর্যালোচনায় দেখা গেছে যারা সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি পড়ে তাদের প্রশ্ন হয় ঘ ইউনিটে; এসব প্রশ্ন কলা অনুষদে যুক্ত করলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যে যার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি হবে।
অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, যে ধরনের আলোচনা করা দরকার ছিল, তা হয়নি। তিনি বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়নি। তবে বলা যেতে পারে, একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে এ অনুষদের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা ছিলেন। সেখানে আমরা তো আপত্তি করেছি।
প্রশাসন নানা ইতিবাচক দিক খুঁজে পেলেও ঘ ইউনিট উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে শঙ্কিত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা। তারা মনে করছেন এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরীক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের মতে, এমন সিদ্ধান্তে সময় বাঁচবে, ব্যয় কমবে। ভর্তি পক্রিয়াও হবে সহজ। অন্যদিকে অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়ার মতামত, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুইটা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলেও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর তাতে একটি গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে সব বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্নের দিকে আগাচ্ছে ঢাবি। তারই প্রথম পদক্ষেপ ঘ ইউনিটের বিলোপ। তবে ততদিন পর্যন্ত ঘ ইউনিটের বহাল চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা।
তবে, ঘ ইউনিট বন্ধ করে দেয়ার এসব যুক্তির চেয়ে নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ এক কর্তার সঙ্গে সাবেক একজন ডিনের মতবিরোধ; এমনটা জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
/এমএন
Leave a reply