মিল্কী হত্যার চার্জশিট থেকে টিপুকে বাদ দেয়ায় কিছু মানুষের ক্ষোভ থেকে যায়। আর তার প্রতিক্রিয়ায়ই টিপুকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন। শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, খুনের বদলে খুনের ধারণা থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। মিল্কী হত্যা, যুবলীগ কর্মী বাবু (ওরফে বোচা বাবু) হত্যার মামলা তুলে নেয়া, এবং মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি নিয়ে বিরোধের জেরেই খুন হন টিপু।
টিপু হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিম ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব ছিল। এর পরম্পরায় ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। মিল্কী হত্যাকাণ্ডের ৩ বছরের মধ্যে একই এলাকার বাসিন্দা রিজভি হাসান (বোচা বাবু) হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
প্রসঙ্গত, র্যাবের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত রাতে রাজধানীর মুগদা, শাহজাহানপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার (শুটার সালেহ) (৩৮), মো. নাছির উদ্দিন (কিলার নাছির) (৩৮), মো. মোরশেদুল আলমকে (কাইল্লা পলাশ) (৫১) গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে জানায়, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের সাথে টিপুর সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুক, পলাশসহ একটি পক্ষ মানববদ্ধন, আলোচনা সভা, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া বাদীর মাধ্যমে চার্জশিটের নারাজি দেয়ার চেষ্টা করে। তার পরও জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
পরে গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুক ও অন্যান্য সহযোগীরা স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে। পরে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচারকার্য শুরু হয়। গ্রেফতারকৃতরা জানায় তাদের ধারণা প্রতিপক্ষ টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালামের সাথে গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা করে। তবে জাহিদুল ইসলাম টিপুর কারণে কালাম মীমাংসায় যায়নি।
তারা এক পর্যায়ে কালামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে, কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সাথে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে তারা যখন দেখলো কালামের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, তখন তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে যাতে মামলা পরিচালনায় ধীরগতি আনা যায়। তাদের ধারণা ছিল, বাদী কালাম একা মামলাটি ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারবে না। এরই প্রেক্ষিতে ৩ মাস আগে আদালত চত্বরেই সাক্ষ্য শেষে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা করে।
গ্রেফতারকৃতরা জানায়, রিজভী হাসান (বোচা বাবু) হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেফতারকৃত মো. মোরশেদুল আলমকে (কাইল্লা পলাশ) তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে বলে। গ্রেফতারকৃত মোরশেদুল আলম রাজী থাকা সত্ত্বেও জাহিদুল ইসলাম টিপুর চাপে সে সাক্ষ্য দেয়। মোরশেদুল আলম পরবর্তীতে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের গ্রেফতারকৃত আসামিদের সাথে যুক্ত হয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়। গ্রেফতারকৃত মোরশেদুল আলমকে খুন করার জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই গিয়ে সেখানেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়। খুনটি দেশে হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে।
কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসার কাছে তথ্য পাঠাতো। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গ্রেফতারকৃত কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরে টিপু গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় পলাশ তাকে তার অবস্থান সম্পর্কে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। সে অনুযায়ী রাত সাড়ে দশটার দিকে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে খুনটি হয়।
/এডব্লিউ
Leave a reply