‘একটি পা হারাতেও প্রস্তত, তবু ঢাবি মেডিকেলের আধুনিকায়ন না দেখে যাবো না’

|

অনশনরত ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ৬ দফা দাবিতে অনশন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন রনি। পা ও কোমরে আঘাত পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে জানিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী রনি যমুনা নিউজকে বলেছেন, প্রয়োজনে একটি পা স্যাক্রিফাইস করতেও প্রস্তুত আমি। তবু ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন না দেখে যাবো না।

অনশনরত শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি বলেন, ৫ এপ্রিল আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হই। আমার হাঁটু আর কোমর মচকে গেছে। আর হাঁটুর নিচ থেকে মাংস চলে গেছে। এখানে ড্রেসিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, সুব্যবস্থাও নেই। এতদিন ভালোভাবে ড্রেসিং করাতে পারিনি। এজন্য পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে গতকাল (৯ এপ্রিল) ড্রেসিং করিয়ে এসেছি। তখনই দেখলাম এখানে ইনফেকশন হয়ে গেছে। এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের অপ্রতুলতা ও সীমাবদ্ধতার কথা বারবার করে বলেছে। কিন্তু তাদের কথায় আমি আস্থা পাচ্ছি না। আমি বলেছি, আপনাদের যেসব সেবা থাকা দরকার, যেসব সেবার প্রয়োজনীয়তা আছে সেসবের ব্যাপারে কথা বলুন। আমার সেবা আমাকে বুঝিয়ে দিন। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চিকিৎসা ফি না দিয়ে তো আমি পরীক্ষার হলেও বসতে পারি না। এই চিকিৎসা আমার অধিকার, এটা আমার দাবি। এটা আমাকে দিতে হবে। আমি আসার পর ৪৮ ঘণ্টা কোনো ডাক্তারের দেখাও পাইনি, যেখানে আমাদের ২৯ জন চিকিৎসক। কোনো ওয়ার্ডবয়ও কাছাকাছি আসেনি, ব্যাপারটা এরকম। এজন্যই আমার ক্ষোভটা জন্মেছে। আমি সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে এতদিন কাজ করে যাচ্ছি বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে, আমার ঘরে এত সমস্যা! যেখানে আমিই সহ্য করতে পারছি না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত শিক্ষার্থী কীভাবে সহ্য করছে! সেই ক্ষোভ থেকেই আমি আমার অবস্থান জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছি।

মহিউদ্দিন রনি আরও বলেন, ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করার পর প্রশাসনের চাপে এখানকার চিফ ম্যাম এসেছিলেন। তিনিও তাদের অপ্রতুলতা ও সীমাবদ্ধতার কথা বলেন, কিন্তু তাতেও ভরসা পাইনি আমি। তাই ঠিক করেছি, প্রয়োজনে একটি পা স্যাক্রিফাইস করতে প্রস্তত আমি। তবু মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন না দেখে যাবো না। অনেকেই এসেছেন আমাকে দেখার জন্য। আমি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী। আমাকে দেখতে হলের প্রভোস্ট এসেছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমাদের হলের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় সকল চাহিদার কথা তাদের মিটিংয়ে তুলে ধরবেন।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিজের দাবিতে অটল থাকার সংকল্প জানিয়ে মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমার পরিবার, বড় ভাই, প্রভোস্ট, এমনকি এখানকার সবাই আমাকে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে ভর্তি করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, আমি যদি এখান থেকে চলে যাই তবে এই মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়ন আর কোনোদিন হবে না। আমি গতকাল থেকেই অনশন শুরু করেছি। আমার আল্টিমেটাম আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত, অনশনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন অন্তত সাড়া দেয়। আমি চেয়েছিলাম, অনশনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত আশ্বাস দেয়া হোক, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হোক কাজ। আমি দেখে যেতে চাই যে, তারা কাজ শুরু করেছে। আমি আমার ঔষধ ও খাবারদাবার বন্ধ করে দিয়েছি, তাই এখন কিছুটা দুর্বল। দুপুর ২টার পর আমরণ অনশন শুরু করবো। আশা করছি, আমি অনশন চালিয়ে যেতে পারবো।

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply