সবাই পক্ষে সংবাদ চায়, সাংবাদিক দেখলে পেটায়

|

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছেন দু’পক্ষকেই। সোমবার দিবাগত রাতে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষের প্রথম দফায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে নাজেহাল হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। তখন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর সেভাবে চড়াও না হলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ছাত্রদের ছাপিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার দিনভর তথ্য সংগ্রহে ঘটনাস্থলে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা করেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। তারা একাধিক বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টার, ভিডিও জার্নালিস্ট, অনলাইন ও পত্রিকার সংবাদকর্মীদের আহত করেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায় আঘাত করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রায় সবপক্ষের অভিযোগ, সংবাদকর্মীরা তাদের পক্ষে সংবাদ করছেন না। যদিও সংবাদকর্মীদের দায় কারো পক্ষ নেয়া নয়, বরং ঘটনা বস্তুনিষ্ঠভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা। সংবাদিকদের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেসি)।

সংবাদকর্মীদের এসব সংগঠন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়, তারা যেই হোক না কেন তাদের পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সেসব হামলাকারী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন মহলের মদদে পার পেয়ে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।

নিউমার্কেট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার আহত সাংবাদিকদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষ থামাতে ২০-২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। সেখানে দুই দোকান মালিকের বাক-বিতণ্ডায় একজনের পক্ষ নেয়ায় মারধরের শিকার হন তারা। এর জেরে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এর ৫ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৪০ জন। সকাল থেকেই হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিন সকালে নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় তারা। সকাল থেকে ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট খোলার জন্য জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের রূপ নেয়।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুঃখের সাথে বলছি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে মারামারি-সহিংসতা-সংঘর্ষ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। ছাত্র, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পুলিশ আহত। চরম ধৈর্য সহকারে কাজ করছে পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হবে। যারা ঘটনা ঘটালো, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এর কিছুক্ষণ পরেই সড়ক ছেড়ে দেয় ঢাকা কলেজের অধিকাংশ ছাত্র। নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষস্থল ত্যাগ করেছে পুলিশের সাজোয়া যান। নিউমার্কেটের একপাশের সড়কে রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ইফতারের সময় আবারও শুরু হয়েছে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ।

/এমএন




সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply