মন খারাপের কথা সামাজিক মাধ্যমে সত্যিই কি লেখা বা বলা যাবে না?

|

কেন এমন আইন করলো বিটিআরসি?

মন খারাপের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সত্যিই কি লেখা বা বলা যাবে না? বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলছেন, সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটির যে বিধানের খসড়া প্রকাশ হয়েছে, এতে বাক স্বাধীনতা হরণে এরকম কিছু নেই। তবে সাইবার আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধানটিতে অনেক কিছুই সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এভাবে চূড়ান্ত হলে ক্ষমতাবানরা চাইলেই আইনের অপপ্রয়োগ করতে পারবে। অবশ্য ব্যবহারকারীরা সাইবার নিরাপত্তার পাশাপাশি চান স্বাধীনতা।

বিনোদন, শিক্ষা ও সচেতনতামুলক কার্যক্রমের বড় ক্ষেত্র এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আবার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক হয়রানি এবং গুজবের অন্যতম ক্ষেত্রও এখন মাধ্যমটি। ভালো ও মন্দের মিশেলে গড়া এই প্লাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন বিধান। এরইমধ্যে ‘ডিজিটাল-সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্লাটফর্ম-২০২১’ এর খসড়া প্রকাশ করেছে বিটিআরসি। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কও। বলা হচ্ছে, বিধানটি কার্যকর হলে মন খারাপের মতো নিরীহ কথাও নাকি বলা যাবে না সামাজিক মাধ্যমে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কী কথা বলছি, কী তথ্য আদানপ্রদান করছি তা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। কারণ, সেখানে আড়ি পাতা যাবে। আমি হয়তো ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলাম যে, আমার মন খারাপ। এজন্য কেউ হয়তো মামলা করে দিলো যে, এতে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কারণ, এত সুখের একটা দেশে তোমার মন খারাপ হবে কেন! রূপক অর্থেই এটি আমি বলেছিলাম যে, আমাদের আইনগুলো এমন হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, তরুণ প্রজন্মের স্বার্থে অনেক ধরনের কন্টেন্টই আমাদের দিতে হবে। এটা সচেতনতামূলক কন্টেন্টও হতে পারে। আবার শিক্ষামূলক কন্টেন্টও হতে পারে। কোনো কনটেন্ট কারও বিরুদ্ধে চলে যাবে, এমন অভিযোগে যদি দিতে না পারি তবে একটা বাধার সৃষ্টি হবে।

বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্মাতা তারিক আনাম খান বলেন, সবকিছু খুব সঠিকভাবেই হবে, এমন ধারণা নিয়ে করা হলে তো শিল্পকর্ম হবে না। নাট্য হবে না। ফিকশন হবে না। ফিকশন সব সময়ই প্রচলিত ধারণার বাইরে কিছু প্রশ্ন করে; এর একটি সম্পর্ক সমাজের সাথেও থাকতে পারে।

তবে বিটিআরসি বলছে, ইউটিউব ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তি আক্রমণ, গুজব ও অপপ্রচার রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিধানটি করা হচ্ছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আপনার বিরুদ্ধে যদি কোনো মানহানিকর কন্টেন্ট তৈরি করা হয় তবে কি আপনি চাইবেন না তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক? আপনার কি সেই অধিকার নেই? অপপ্রয়োগের ব্যাপারটি এখানে সেভাবে নেই। কারণ, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তৃত্ব। তাদের আমরা এটা দিয়ে নিবৃত্ত করবো যে, তোমরা এগুলো আপলোড করতে দিয়ো না, বা কারা আপলোড করছে তাদের তথ্যগুলো আমাদের দিতে হবে।

উদ্দেশ্য ভালো হলেও অপরাধ সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় বিটিআরসির প্রবিধানে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের। অভিনেতা ও নির্মাতা তারিক আনাম খান বলেন, এখানে একটু বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। চিন্তার স্বাধীনতাকে অনুমোদন দিতে হবে। কেউ যদি পেছনে খড়গ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে তো আমার প্রতি মুহূর্তেই মনে হবে, আমি এটি করতে পারবো না।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার আরও বলেন, আমরা ফেসবুক, ইউটিউবের সাথে প্রতি তিন মাসে একবার মিটিং করছি। আমরা কিন্তু ওদেরকেও খসড়াটি পাঠিয়েছি। এই আইনের মধ্যে সরাসরি পেনাল অ্যাকশনে যাওয়ার মতো তেমন কিছু থাকবে না।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী মে মাসে রেগুলেশনের খসড়া জমা দেয়া হবে উচ্চ আদালতে।

আরও পড়ুন: ‘অসৎ উদ্দেশ্য আছে এমন কিছু এনজিওর তথ্য দিয়ে তৈরি মানবাধিকার রিপোর্ট’

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply