সত্যজিৎ রায়ের ৩০তম প্রয়াণ দিবস আজ

|

সত্যজিৎ রায়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেয়া ছবি।

বাংলা সাহিত্য যেমন রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অপূর্ণ তেমনি বাংলা চলচ্চিত্র সত্যজিৎ রায় ছাড়া অসম্পূর্ণ। আধুনিক চলচ্চিত্রের জাদুকর ক্রিস্টোফার নোলান সত্যজিৎয়ের প্রথম সিনেমাটিকে চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিনেমা বলে মন্তব্য করেন।

বিশ্ব চলচ্চিত্রের ধ্রুবতারা কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ৩০তম প্রয়াণ দিবস আজ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি শুধু চলচ্চিত্রকার হিসেবেই নন বরং আলোকচিত্রী, চিত্রকর, শিশুসাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও ছিলেন সুপরিচিত। উপমহাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য তিনি আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন।

১৯২১ সালে কলকাতা শহরে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হলেও পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী তার পিতামহ। তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমার রায় মারা যান। মা সুপ্রভা দেবী তাকে কষ্ট করে বড় করেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সত্যজিৎ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে যান। কিন্তু মায়ের অনুরোধে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই ১৯৪৩ সালে কলকাতায় ফিরে যান তিনি।

তার কর্মজীবনের শুরু একজন অলঙ্করণ শিল্পী হিসেবে। এ পেশায় থাকার সময় কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’র ছোটদের সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপু’র প্রচ্ছদ আঁকতে গিয়েই ‘পথের পাঁচালী’কে চিত্রায়িত করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

১৯৫২ সালে পথের পাঁচালির শ্যুটিং শুরুর মাধ্যমে সত্যজিৎ রায় শুরু করেন চলচ্চিত্র পরিচালনা। চলচ্চিত্রটি শেষ করতে তার সময় লেগেছিলো দীর্ঘ তিন বছর। মুক্তি পাওয়ার পরপরই দর্শক-সমালোচক সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে এবং বহুদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এবং ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়।

এ সিনেমার সাফল্যের পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এরপর একে একে নির্মাণ করেন- অপরাজিত, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, মহানগর, চারুলতাসহ আরও অনেক সিনেমা। ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনী চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি।

পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার- এ তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে অপু ট্রিলজি বলা হয়। এই ট্রিলজি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বা ম্যাগনাম ওপাস হিসেবে বহুল স্বীকৃত। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে সত্যজিৎ রায় ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বাংলা সাহিত্যে তিনি সৃষ্টি করে গেছেন অমর দুই চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদা ও বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু। লিখে গেছেন অসংখ্য উপন্যাস ও গল্প; যেসব লেখা কালের গণ্ডি পেরিয়ে আজও সবার প্রিয়।

সত্যজিৎ রায় তার দীর্ঘ কর্মজীবনে প্রচুর পুরস্কার অর্জন করেছেন। তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মৃত্যুর কিছুদিন আগে পাওয়া অস্কার পুরস্কার। তার প্রথম চলচ্চিত্র‘পথের পাঁচালী’ মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কারটি। এমনকি তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। নিজ দেশেও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ভারতরত্নসহ অসংখ্য পুরস্কার পান।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি ১৯৯২ সালের আজকের দিনে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে ছেড়ে চলে গেছেন এই পৃথিবী। কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তি। বাংলা সিনেমা ও সাহিত্যের জগতে এমন আরেকটি বহুমুখী প্রতিভা বাংলাভাষা আর কখনও পাবে কী না সন্দেহ।


/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply