গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এক দফার আন্দোলন করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির সংলাপে যোগ দেয়া বক্তারা। তারা বলেন, সরকারকে সরে যেতে হবে, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এবং নির্বাচনে বিজয়ী দলকে গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহনের অঙ্গীকার করতে হবে- এই তিন মৌলিক পয়েন্ট হবে বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তি।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) এবি পার্টির উদ্যোগে “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ, পন্থা এবং পদক্ষেপ” শীর্ষক এক মুক্ত সংলাপে বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ৯০’র গণ-অভ্যুত্থানের আদলে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণআন্দোলন গড়ে তুলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
পার্টির আহবায়ক ও সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
সংলাপে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. রেজা কিবরিয়া, প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক, গৌতম দাস, প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার, ড. সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, নগরিক ভাবনার আহবায়ক হাবিবুর রহমান, শিক্ষক ও গবেষক প্রফেসর ড. শহীদ মঞ্জু, লেখক আলাউদ্দিন মল্লিক, এনডিপির মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক, এবি যুব পার্টির সমন্বয়ক এবিএম খালিদ হাসান, এবি পার্টির সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, গণ-আজাদী লীগের মহাসচিব আতা উল্লাহ খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুজ্জামান ফিরোজ, মানবিক বিশ্ব গড়ার আহবায়ক শরীফ সাকি, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মোমেনা খাতুন, রেইনবো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক প্রমুখ।
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনের পথ ও পন্থা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই আমাদের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ভাবতে হবে। একটি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনোভাবেই আর গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গণআন্দোলন ছাড়া এই সরকারের পতন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। কাজেই বিরোধী দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতে হবে সরকারের পতন আন্দোলনের ব্যাপারে।
ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, সব দলই এই সরকারের পতনের ব্যাপারে একমত কিন্তু কার নেতৃত্বে আন্দোলন হবে, নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে এবং সবাই একজোট হয়ে আন্দোলন করার ব্যাপারে একত্রিত হওয়া কঠিন ব্যাপার। আমাদের সমাজ একটি বিভাজিত সমাজ। সুবিধা ভোগী রাজনৈতিক দুর্বৃত্তে ঘিরে আছে সব রাজনৈতিক দল। কাজেই শুধু একটি নির্বাচনই সমস্যার সমাধান নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তারা মনে করে একদল যাবে আরেক দল আসবে, আমাদের কী হবে। জনগণের সামনে আগে আপনারা রাষ্ট্র নিয়ে আপনাদের ভাবনা উপস্থাপন করুন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এবি পার্টি চমৎকার একটি আলোচনা শুরু করেছে। আজ জাতির সামনে বর্তমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ভবিষ্যত পরিস্কার করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একেক পক্ষ একেক রকম চিন্তায় রয়েছে। যে যে চিন্তায়ই থাকুক নূন্যতম বিষয়ে আমাদের একমত হতে হবে। আগামী নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হতে হবে এবং এই সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, এবি পার্টির সাথে আমাদের আন্তরিক সম্পর্ক, আমরা একসাথে রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখবো ইনশাআল্লাহ। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে, যার মেয়াদ ৩/৪ মাস হলে হবে না। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক প্রশাসনকে হটিয়ে একটি জনবান্ধন প্রশাসন থাকবে যারা নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভুমিকা রাখবে।
গৌতম দাস বলেন, আন্দোলনে বিজয়ী শক্তি ছাড়া নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে, যে সরকার প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন সহ সরকারের প্রতিটি স্তরে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে।
মুক্ত সংলাপ শেষে বিজয় একাত্তর চত্বরে গণইফতারের আয়োজন করা হয়।
Leave a reply