ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
হাজার হাজার টাকার নোটসহ ব্যাগভর্তি টাকা পেয়েও তা ফেরত দিলেন এক দারিদ্র ইজিবাইক চালক। ঐ ব্যাগে ছিল নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। টাকা ফেরত পেয়ে খুশিতে আত্মহারা টাকার মালিক ওই ইজিবাইক চালককে ৫ হাজার টাকা দিতে চান। তবে ঘর্মাক্ত আর পরিশ্রান্ত শরীরে মুখে এক চিমটি হাসি দিয়ে তা বিনয়ের সাথে ফেরত দিয়ে ইজিবাইক চালক বলেন, ‘আপনার টাকা আপনাকে ফেরত দিতে পেরেছি, এটাই বড় কথা’।
ঘটনাটি সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজলার মালিপাড়া গ্রামের। ইজিবাইক চালকের নাম আনোয়ার হোসেন। তার বাড়ি শৈলকুপা পৌরসভার মালিপাড়া গ্রামে। অন্যদিকে ব্যাগভর্তি টাকার মালিক ছিলেন শৈলকুপার ধাওড়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার শিকদার কলেজের প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম। তার বাড়িও শৈলকুপা উপজেলার বড়িয়া গ্রামে।
জানা গেছে, প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম শৈলকুপার রুপালী ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। পরে সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা দেনা পরিশোধ করে ব্যাগভর্তি বাকি টাকা নিয়ে ইজিবাইকে ওঠেন। তবে ভুলক্রমে ব্যাগ রেখে ইজিবাইক থেকে নেমে পড়েন তিনি। পরে টাকার কথা মনে পড়লে ইজিবাইক চালককে খুঁজতে থাকেন তিনি। কারা তখন পাশের যাত্রী ছিল তাদের খোঁজ করেন, পরে জানতে পারেন ইজিবাইক চালকের বাড়ি মালিপাড়া। তবে ইজিবাইক চালকের সঠিক পরিচয় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন তিনি।
উপায়ন্তর না পেয়ে শৈলকুপা থানায় জিডি করতে যান ওই প্রভাষক। এরই মধ্যে ইজিবাইক চালক বাড়িতে পৌঁছালে গাড়িতে থাকা ব্যাগটি তার স্ত্রীর নজরে আসে। তখনও ইজিবাইক চালক আনোয়ার হোসেন জানেন না তার গাড়িতে রাখা ব্যাগে এতোগুলো টাকা আছে। স্ত্রীর কথা শুনে ব্যাগ খুলে দেখেন হাজার হাজার টাকা, যার সবই ১ হাজার টাকার নোট। টাকার বান্ডিলের সাথে ভিজিটিং কার্ড ও কাগজপত্র পড়ে শৈলকুপার মালিপাড়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে অবগত করে ব্যাগভর্তি টাকা রেখে আসেন তিনি।
ইতিমধ্যে শৈলকুপা থানা পুলিশ জানতে পারেন মালিপাড়া মাদরাসায় তার হারিয়ে যাওয়া ঐ টাকা জমা রাখা হয়েছে। তখন থানার ওসি আমিনুল ইসলাম উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে প্রকৃত মালিককে তার টাকা বুঝিয়ে দেন। একই সাথে ইজিবাইক চালক আনোয়ার হোসেনের সততার জন্য নগদ ৫০০ টাকা পুরস্কৃত করেন ওসি। অন্যদিকে প্রভাষক মাওলানা আশরাফুল ইসলাম তাকে ৫ হাজার টাকা দিতে চাইলেও তা নেননি ইজিবাইক চালক আনোয়ার।
শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম জানান, টাকা হারিয়ে থানায় জিডি করতে আসে আশরাফুল নামে এক ব্যক্তি। পরে খবর পাই টাকাগুলো মাদরাসায় ইজিবাইক চালক গচ্ছিত রেখেছেন। সেখান থেকে টাকা নিয়ে উভয়পক্ষকে থানায় এনে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেয়া হয়। ইজিবাইক চালকের এমন সততা দেখে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
এসজেড/
Leave a reply