স্টাফ রিপোর্টার, যশোর:
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের সভাপতি, সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৯ নেতা পদত্যাগ করেছেন। একই সাথে, নিজ উপজেলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে যশোর প্রেস ক্লাবে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে প্রেস ক্লাবের সামনে ১০ জন নেতাকর্মী বেধড়ক মারপিটের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন পদবঞ্চিত নেতারা। তবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত, আহতরা তাদের নাম প্রকাশ না করলেও তারা সবাই লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘পকেট কমিটি’র বিরুদ্ধে এবং পদবঞ্চিত নেতাদের উপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২৯ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। একই সাথে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় মাহমুদুল হাসান রকি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় রমেশ দেবনাথকে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট ঐ কমিটিতে ১ জন করে সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ঘোষিত উপজেলা কমিটিতে অনভিজ্ঞ, বিতর্কিত, রাজনৈতিক ভারসাম্যহীন এবং সদ্য এসএসসি পাশ করা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে একটি শিশু কমিটি আখ্যা দিয়ে খেদাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাদিউজ্জামান বলেন, ঘোষিত কমিটির সভাপতি মণিরামপুর বাজারে একটি ফাস্টফুড ব্যবসায়ী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পর্যন্ত। এমনকি উপজেলায় ছাত্র সমাজের কাছে তিনি বিবাহিত হিসাবে সমালোচিত। সাধারণ সম্পাদক রমেশ দেবনাথের ছাত্রত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুগ্ম সাধারণ পদে মনোনীত এস এম বাপ্পী হুসাইনের নেই ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড শাখারও কোনো সাধারণ সদস্য পদ। সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান অভি সদ্য এসএসসি পাস এবং ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায়নি। এরা সকলেই মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের অপরিচিত মুখ। আমরা দীর্ঘদিন উপজেলা রাজনীতি সংক্রিয় থেকেও পদ-পদবী না পেয়ে হতাশ। অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের পদ দেয়া হয়েছে। এ সকল কর্মকাণ্ডের মূল হোতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হলো। একই সাথে, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের সংক্রিয় সভাপতি-সম্পাদক এবং আহ্বায়করা গণপদত্যাগ করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা হাদিউজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে প্রেস ক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের কাছে হামলার শিকার হয়েছি। এই ঘটনায় ১০ জন ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়েছেন। আহতদের ভেতর মণিরামপুর সরকারি কলেজের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও ভোজগাতি ইউনিয়নের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ গুরুত্বর আহত হয়েছে। তারা শহরের একটি বাড়িতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। তবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা যখন যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়ায় তখন যশোর সরকারি এমএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ ভট্টাচার্য এবং ছাত্রলীগ নেতা রাব্বীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ যুবক আসে। এরপর মণিরামপুর থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে তারা বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে সৌরভ ভট্টাচার্যের সাথে থাকা ছাত্রলীগ নেতা রাব্বী, এনামুলসহ ৮ থেকে ১০ জন যুবক পদবঞ্চিতদের সবাইকে ডেকে নিয়ে সার্কিট হাউজের দিকে যায়। সেখানে হাতুড়ি, লাঠি, হকি স্ট্রিক দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেলে তারা পালিয়ে যায়। এই বিষয়ে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব সাংবাদিকদের জানান, মণিরামপুরে একটি সুন্দর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আরও কয়েকজন ত্যাগী নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। পদ বঞ্চিতদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা কেউ ছাত্রলীগ নেতা নয়।
/এম ই
Leave a reply