কাজী তানভীর মাহমুদ,রাজবাড়ী
জন্মের দুই মাস পরেই মারা যায় বাবা। ভিটে বাড়িহীন অসহায় হত দরিদ্র মায়ের পরম মমতায় একে একে ১৬টি বছর পার করে এসে আজ সফলতা অর্জন। তবুও একমুঠো ভাতের চিন্তায় রাতের ঘুম আসাই দায়।
এতো কিছুর পর আবার জন্মগত ভাবে দুটি চোখের দৃষ্টি নেই বলে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই বড় হতে হয়েছে। নানাবিধ সমস্যা আর দরিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে বেরে ওঠা রাজবাড়ীর মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সূবর্না রাণী দাস (১৬) এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ ৫।
তার এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে খুশি সূবর্নার মা কণিকা রানী দাস সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। সূবর্ণা রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামের মৃত সুভাষ চন্দ্র দাসের মেয়ে।
পড়ালেখার পাশাপাশি সূবর্ণা সমানতালে দক্ষ কবিতা আবৃত্তি আর গানে। তার এই প্রতিভার কথা জেলার অনেকেরই জানা। চলতি বছরের দাদা ভাই শিশু কিশোর প্রতিযোগিতায় উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
সূবর্না রানী দাস রাজবাড়ী জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় মানবিক বিভাগ হতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সফলতার সাথে সম্পূর্ণ করে ভবিষতের দিনগুলো নিয়ে আজ বেশ চিন্তিত সূবর্ণা ও তার মা।
সূবর্ণা রাণী দাস এর সাথে আলাপকালে সে জানায়,‘রাজবাড়ী জেলার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। ভালো করে লেখাপড়া শেষে করে একজন বিসিএস কর্মকর্তা হবো। উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশ ও মায়ের জন্য কিছু করবো। কিন্তু আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে এই পর্যন্ত এনেছে। সে আর পারছে না। আমার বাবা নেই। পরিবারে নেই কোন উপর্জনক্ষম ব্যক্তি। সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমি পড়তে চাই। মানুষের মত মানুষ হতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই’।
সূবর্ণার মা কণিকা রাণী দাস বলেন,সূবর্ণার জন্মের দুই মাস পরেই তার বাবা সুভাষ চন্দ্র দাস মারা যান। তারপর থেকে আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে বেঁচে আছি। আমার মেয়েটি লেখা পড়ায় অনেক ভালো। সে ভালো রেজাল্ট করেছে। মেয়েটির লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সরকার ও সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
রাজবাড়ী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাইদা খানম বলেন, ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় এর অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষক মোঃ বোরহান স্যারের কাছে সূর্বণা রানী দাস ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ব্রেল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করেছে। এবারের ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রাইটারের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। গত ৬ মে পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেখা যায় সূর্বণা জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার এই সাফল্যে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা অনেক খুশি। সূবর্ণা জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ আশা করেও ৪.৫০ পেয়েছিলো। তারপর সে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেতে কঠিন অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফল অর্জন করেছে। সূবর্ণা লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি ও গানে পারদর্শী। পড়ালেখার সাথে সাথে সহ শিক্ষা কার্যক্রমে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। সূবর্ণা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। বড় হয়ে সে বিসিএস কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন দেখে। তার এই স্বপ্ন পূরণে আমরা দোয়া করি। তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
Leave a reply