কালের আবর্তে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে বহু সভ্যতা। তবে কয়েক শত বা হাজার বছর আগে এসব সভ্যতার নির্মিত স্থাপনা কোথাও না কোথাও এখনও দাঁড়িয়ে আছে, প্রমাণ দিচ্ছে তাদের অস্তিত্বের। সম্প্রতি বলিভিয়ার অংশে অবস্থিত অ্যামাজন জঙ্গলে খোঁজ মিলেছে বহু পুরনো কয়েকটি শহরের। বড় বড় দালান, ভাস্কর্য ছাড়াও এই সভ্যতার নির্মিত একটি ৬৯ ফুটের পিরামিডও নজরে এসেছে গবেষকদের। খবর ডেইলি মেইলের।
‘লেজার ইন দ্য স্কাই’ প্রযুক্তির মাধ্যমে বলিভিয়ার ল্যানোস ডি মোজোস সাভানা জঙ্গলে গভীরে খোঁজ পাওয়া গেছে এই শহরগুলোর। এই প্রযুক্তিতে হেলিকপ্টার, ছোট বিমান বা ড্রোনের সঙ্গে একটি লেজার স্ক্যানার যুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে ভূখণ্ডে লেজার রশ্মি ফেলা হয়। এতে ওই ভূখণ্ডের একটি ডিজিটাল মডেল কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে ওঠে। সেখানেই প্রথম ধরা পড়ে এই হারিয়ে যাওয়া শহরগুলো।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির গবেষকদের সমন্বয়ে একটি দল এই শহর নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তাদের মতে, শহরটি নির্মিত হয়েছিল ৫০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। জঙ্গলের কাসারাবে সম্প্রদায় এই শহরগুলো তৈরি করেছিল বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু স্থাপনা আবিষ্কার করেছে গবেষকরা। পাশাপাশি ৫৪ একর জুড়ে বিস্তৃত এই কাঠামোতে ১৬ ফুট উঁচু ছাদও আছে।
গবেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলে একটি কেন্দ্রীয় শহর ছিল ৪ হাজার ৫০০ খ্রিস্টাব্দে। এই শহরই একটি বড় জনপদকে নিয়ন্ত্রণ করতো। মোটামুটি ৫০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছোট-বড় শহরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় এই শহর থেকেই অন্যগুলোকে শাসন করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় শহরে ৩০টি ফুটবল মাঠের সমান একটি কাঠামোর ওপর ৬৯ ফুট লম্বা এক পিরামিডের খোঁজ মিলেছে। অন্যান্য ছোট শহরগুলো সম্পূর্ণ উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল বলেও গবেষকরা মনে করছেন।
বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত মনে করা হতো, অ্যামাজন অঞ্চলের বাসিন্দারা মূলত শিকারি উপজাতি। এই অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে থাকা মোজোস সমভূমিতে বছরে কয়েক মাস বন্যা হওয়ার কারণে এই এলাকার বাসিন্দারা স্থায়ী বসতি তৈরি করতে পারেন না। কিন্তু এখানে শহরের খোঁজ মিললো তাতে মনে করা হচ্ছে, এই জনপদ তাদের অন্যান্য সমসাময়িকদের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। তাদের নির্মাণ কৌশল বেশ নিপুণ ও দক্ষ।
অবশ্য এই শহরগুলোতে ঠিক কত মানুষ বাস করতো তার স্পষ্ট ধারণা এখনও মেলেনি। গবেষকরা বলছেন, এখানে বেশ ঘনবসতি ছিল। তবে কেনো শহরগুলো থেকে মানুষ চলে গেছে তা এখনও অজানা।
এসজেড/
Leave a reply