বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে ইতোমধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু স্টাডে ডি ফ্রান্সে লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে যে পারফরমেন্স দেখিয়েছেন তিনি, তাতে গোলপোস্টের নিচে সেরাদের একজন থেকে হয়তো বেরিয়ে কেবল ‘একজন’ই হয়তো হয়ে গেলেন কর্তোয়া। তিনি এখন বাকিদের চেয়ে এগিয়ে; গোলপোস্ট আগলে রাখা জীবন্ত এক কিংবদন্তি যাকে তুলনা করা হচ্ছে পিটার স্মাইখেল, অলিভার কান, এডউইন ভ্যান ডার সারদের সাথে।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে ধ্রুপদী লড়াই কম দেখেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। কিংবদন্তিতুল্য ম্যাচ আর খেলোয়াড়, দুই-ই তৈরি হয় এমন মহিমান্বিত লড়াইয়ের রাতে। এবার সেই তালিকায় হয়তো যুক্ত হলো থিবো কর্তোয়ার নাম। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের একমাত্র গোলে লিভারপুলকে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলেও ম্যাচে রিয়ালের আসল নায়ক গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। ম্যাচে সালাহ, মানেদের ৯টি শট দুর্দান্ত সেভে রুখে দিয়ে জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। আর এর মাধ্যমেই অলিভার কান ও এডউইন ভ্যান ডার সারের পর তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ম্যাচ সেরা হলেন কর্তোয়া। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসেই অনন্য হয়ে গেলেন কর্তোয়া। ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের রাতে কর্তোয়ার চেয়ে বেশি সেভ নেই ইতিহাসের অন্য কোনো গোলরক্ষকের নামের পাশে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এমন রেকর্ড ভাঙতে চাইলে অবশ্যই অন্য কোনো গোলরক্ষককে উপহার দিতে হবে অতিমানবীয় পারফরমেন্স।
রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক করিম বেনজেমা। পুরো মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করা বেনজেমা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে করেছেন ১৫ গোল। তবে মাদ্রিদের এই সাফল্যের পেছনে নায়ক হিসেবে বেলজিয়ান দীর্ঘদেহী কর্তোয়ার অবিশ্বাস্য পারফরমেন্স এখন আসছে সকলের নজরে।
সতীর্থরা তাকে ডাকেন জিরাফ নামে। ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলরক্ষকের রিফ্লেক্স অ্যাকশনের সামনে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের একের পর প্রচেষ্টা ফিরে এসেছে ব্যর্থ হয়ে। এডার মিলিটাও, ডেভিড আলাবাদের ডিফেন্স অনেকবারই ভেঙে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে। কিন্তু অটল পাহাড়ের মতো কর্তোয়া ছিলেন বলেই হয়তো ব্যালন ডি’অরে করিম বেনজেমার নামকে দেয়া হচ্ছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী আসন।
বেনজেমা যেমন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্ম উপভোগ করছেন ঠিক তেমনি ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দে আছেন থিবো কর্তোয়া। গ্রুপ পর্ব তো আছেই; পিএসজি, চেলসি, ম্যানসিটি গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচেই দুর্দান্ত সব সেভ করে রিয়ালের জয়ের পর্দার পেছনের কারিগর হয়ে থেকেছেন কর্তোয়া।
ফাইনালে সালাহ, মানে ও কেইটার আক্রমণগুলোর সেভ ছিল যে কোনো গোলকিপারের জন্য রীতিমত স্বপ্নের মতো। রিয়ালের ১৪তম হলেও ক্যারিয়ারের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত এই গোলরক্ষক। কর্তোয়া বলেন, ম্যাচের আগে আমি বলেছিলাম ফাইনাল খেললে মাদ্রিদ সব সময় জেতে। আমি এবার ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাই। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিরস্কার করা হয় আমাকে। আমি সেরাটা দিয়ে তাদের ভুল প্রমাণ করেছি। বিশেষ করে ইংলিশদের কাছ থেকে কখনই প্রাপ্য সম্মান পাইনি।
তবে এখন থেকে তার সেই সম্মান না পাওয়ার কোনো কারণ হয়তো দেখছেন না কেউই। মাদ্রিদের কিংবদন্তি গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াসের ভাষায়, বহু বছরের মধ্যে কোনো গোলরক্ষককে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এভাবে ব্যবধান গড়ে দিতে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
আরও পড়ুন: এই হারের কোনো ব্যাখ্যা মাথায় আসছে না: ক্লপ
/এম ই
Leave a reply