সিনিয়র করেসপনডেন্ট, সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে একই স্থানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে বেলকুচির মুকুন্দগাঁতী বাস টার্মিনাল এলাকায় বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরাম ও উপজেলা ছাত্রলীগ একই স্থানে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (৮ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় ১৪৪ ধারা জারির তথ্য নিশ্চিত করেছেন বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৫ জুন) সন্ধ্যায় বেলকুচি পৌর এলাকার মাজেম মিয়ার মোড়ে ভাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদারের উপর হামলার চালান পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আকতার হামিদ, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎসসহ আরও ৬ ছাত্রলীগ নেতা।
এ ঘটনায় পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি আকতার হামিদসহ তার সহযোগী ৭ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন ভাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বেলকুচি উপজেলা ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া উত্তর বানিয়াগাঁতি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাবদ ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মাজেম মিয়ার মোড়ে পৌছালে পূর্ব শত্রুতার জেরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তার হামিদ ও তার সহযোগীরা তার উপর দেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও তার নিকটে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আকতার হামিদ ও তার সহযোগীরা। এতে প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা আহত কাদেরকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ হামলার ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, রোববার সন্ধায় পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার সহযোগীরা আমার ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। আমাকে দেশী অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ সময় আমার সঙ্গে থাকা ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের তালুকদারকেও ব্যাপক মারপিট করেছে তারা। তিনি বর্তমানে আহত অবস্থায় এনায়েতপুর খাঁজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজে অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমি বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোনো আসামীকে এখনও গ্রেফতার করেনি। আসামিরা সবাই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর হুমকিধামকি দিচ্ছে। প্রশাশনের কাছে বিচার না পেয়ে আমাদের চেয়ারম্যান ফোরামের কাছে অভিযোগ করি। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ডাক দেই। উপজেলার সকল চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ তাদের সমর্থকদের নিয়ে এ মানববন্ধনে উপস্থিত থাকবেন। এ খবর শুনে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আমরা প্রশাসনের এমন আচরণের নিন্দা জানাই।
বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ফোরামের যুগ্ন সম্পাদক ও বেলকুচি রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ বলেন, আমাদের একজন চেয়ারম্যান ও একজন প্যানেল চেয়ারম্যান থানার অতি নিকটে মাদকসেবী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতির হাতে গুরুতর আহত হলো অথচ এখনও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে মানববন্ধনের ডাক দিলাম। কিন্তু সেই স্থানেই ওই হামলাকারীরা পাল্টা মানববন্ধনের ডাক দেয় কিভাবে? বড় কোনো মহলের ইন্ধনে প্রশাসন এমন আচরণ করছে আমাদের সাথে। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার না করলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো আমরা।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রকি বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডলকে নিয়ে ফেসবুকে উল্টাপাল্টা পোষ্ট করায় আমরা উপজেলা ছাত্রলীগ আগামীকাল মানববন্ধনের ডাক দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন কেনো ১৪৪ ধারা জারি করেছে তা আমাদেরও জানা নেই।
বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি মামলা নিয়েছি। আসামি ধরার চেষ্টা করছি। এমন সময়ই দুই গ্রুপ একই স্থানে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। সেজন্য প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আমি রাত সাড়ে ৯টা থেকে মাইকিং করছি। যাতে আগামীকাল কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বেলকুচি উপজেলা সদরে একই স্থানে চেয়ারম্যান ফোরাম ও ছাত্রলীগ মানববন্ধনের ডাক দেয়ায় আমরা প্রসাশনের পক্ষ থেকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছি।
/এসএইচ
Leave a reply