নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ
মামলা করতে গেলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন ওসি। দাবি মতো না পেলে মারপিট করেন। সাধারণ মানুষ, জুনিয়র পুলিশ সদস্যদের সাথে অশোভন আচরণের অভ্যাস তার নিত্যদিনের। এসব অভিযোগ নওগাঁর নিয়ামতপুর থানার ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি কয়েকটি মারপিট ও লাঞ্ছিতের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এই থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনি সহায়তা নিতে থানায় গেলেই সাধারন মানুষকে উৎকোচ গুণতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ওসি আকরাম হোসেনের দ্রুত প্রত্যাহার চেয়ে পুলিশের উপর মহলসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে লিখিত আবেদন করেছেন নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এনামুল হক ও ৮ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
অভিযোগকারীরা জানান, মাস দুয়েক আগে বদলি সূত্রে নিয়ামতপুর থানায় যোগদান করেন ওসি আকরাম। যোগ দেয়ার পর থেকেই তিনি স্থানীয়দের সাথে বেপরোয়া আচরণ শুরু করেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্ত্রী অপহরণের ঘটনায় মামলা করতে গত ১৬ এপ্রিল থানায় যান ভাবিচা ইউনিয়নের নাকইল গ্রামের বাসিন্দা আইজুল। এসময় আইজুলের কাছে ঘুষ দাবি করেন ওসি আকরাম হোসেন । টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। অন্যান্য পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতেই আইজুলকে চড়-থাপ্পড় ও ঘুষি মারেন আকরাম।
নির্যাতনের পর শেষ পর্যন্ত মামলা না নিয়েই থানা থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে আইজুলকে বের করে দেওয়া হয়।
আইজুল জানান, মামলা করতে হলে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চান আকরাম। তাৎক্ষণিক ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে মারধর শুরু করেন ওসি। এসময় থানায় কর্মরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়াও ভাবিচা ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত গ্রাম পুলিশের এক সদস্য উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
ভাবিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উৎকোচ না পেয়ে আইজুলকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছেন ওসি। এতে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
একটি জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে সপ্তাহ দুয়েক আগে সোহেল রানা নামে এক যুবককে মারপিট করেন আকরাম হোসেন। সোহেল রানা নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
সোহেল জানান, দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব মীমাংসার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন ওসি । টাকা দিতে না চাইলে মারপিট শুরু করেন। একপর্যায়ে সোহেলকে হাজতে আটক করে রাখা হয় কয়েক ঘন্টা।
ওসি আকরাম হোসেন একই আচরণ করেন স্থানীয় পাড়ইল এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতির সাথে। স্ত্রীর সামনে স্বামীকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত ও স্বামীর সামনে স্ত্রীর সাথে অশোভন আচরণ করেন ওসি।
শ্রীমন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম জানান, ছোটখাটো যেকোন ঘটনায় দু’পক্ষের কাছ থেকে ওসি নিজেই ঘুষের টাকা নেন। পুলিশী হয়রানির ভয়ে কেউ ওসির বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়ামতপুর থানায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্য জানান, ওসির বেপরোয়া আচরনে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সেখানে কর্মরত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা। বেআইনি ও অনৈতিক অনেক কাজে জড়িয়ে ওসি গোটা পুলিশ বিভাগকে বিতর্কিত করে তুলেছেন।
অবশ্য মারপিট ও নির্যাতনের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন ওসি আকরাম হোসেন। তিনি জানান, বেআইনিভাবে সুযোগ না দেওয়ায় কিছু ব্যাক্তি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যেখানে-সেখানে অভিযোগ করছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মান্দা সার্কেলের (মান্দা-নিয়ামতপুর) সহকারী পুলিশ সুপার হাফিজ জানান, মারপিটের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ না থাকায় ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a reply