শানাকার টর্নেডোয় লণ্ডভণ্ড অস্ট্রেলিয়া ও রেকর্ড বই

|

অবিশ্বাস্য এক জয়ের নায়ক দাসুন শানাকা। ছবি: সংগৃহীত

পাল্লেকেলেতে দাসুন শানাকার ৩ ওভারের টর্নেডো এতই শক্তিশালী ছিল যে, তার ঝাপটায় এলোমেলো হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়া করার রেকর্ড বই। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের মতো অজিদের বিপক্ষে যেন ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঝড়! যে ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল, সেই ম্যাচের হাইলাইটস হয়ে থাকলো শেষ ৩ ওভার; যাতে লঙ্কান দলপতি শানাকার ঝড়ে বিজয়ীর মুকুট পরে লঙ্কানরা।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজটি জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। তবে দাসুন শানাকার ২৫ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটির মাহাত্ন্য এতই বেশি যে, সিরিজের ফলাফল নিয়ে দর্শকেরা খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না বলেই মনে হয়! রান তাড়া করতে করতে নেমে এর আগে স্লগ ওভারে এত বেশি রান করেনি কোনো দল। দলগত অর্জনের সাথে শানাকাও গড়েছেন দারুণ এক রেকর্ড। রান তাড়া করতে গিয়ে ডেথ ওভারেই ৫০ এর বেশি রান করা প্রথম ব্যাটার হয়েছেন দাসুন শানাকা।

শ্রীলঙ্কার ঘরের মাঠ পাল্লেকেলেতে আগে ব্যাট করে ১৭৬ রান করে অ্যারন ফিঞ্চের দল। এক পর্যায়ে ১৫.৪ ওভারে ১০৮ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে দ্বীপদেশটি। তখনও ২৬ বলে ৬৯ রান দরকার ছিল লঙ্কানদের। ম্যাচটি তখন অনেকটাই শেষ, এমন ভেবে বসাই তখন যেকোনো ক্রিকেট সমর্থকের পক্ষে স্বাভাবিক।

শেষ ৩ ওভারে যখন জয়ের জন্য লঙ্কানদের দরকার ৫৯ রান, তখন বোলিংয়ে আসেন ফ্ল্যাট উইকেটে হার্ড লেংথে দারুণ বল করে যাওয়া জশ হ্যাজলউড। এই অজি পেসার তার প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ২ উইকেট। কিন্তু প্রথম ১০ বলে ৪ এবং ১২ বলে ৬ রান করা দাসুন শানাকা যে কিছুটা সময় নিয়ে উইকেটের চরিত্র বেশ ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছেন! ১৮তম ওভারে হ্যাজলউডের টানা চার বলে ২টি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি হাঁকান শানাকা। হার্ড লেংথ ও স্লোয়ারে দুটি ছক্কার পর ফুল লেংথের দুটি ডেলিভারিকে মাটি কামড়ে সীমানা পার করান শানাকা। সাথে দুটি সিঙ্গেলে ১৮তম ওভারে আসে ২২ রান। হ্যাজলউডের ৩ ওভারে ৩ রানের বোলিং ফিগার কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে যায় ৪ ওভারে ২৫ রান! আর ততক্ষণে জমে গেছে ম্যাচ।

শেষ ২ ওভারে ৩৭ রান দরকার, এমন সমীকরণে বল হাতে আক্রমণে আসেন আরেক অজি পেসার ঝাই রিচার্ডসন। স্লোয়ার ফুলটসে ছক্কা মেরে তাকে স্বাগত জানান দাসুন শানাকা। সেই ওভারে মিড অফ ও মিড অন দিয়ে আরও দুটি বাউন্ডারি হাঁকান শানাকা। এই ওভারেও আসে ১৮ রান। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিকে দলকে জয়ের বন্দরে টেনে নিয়ে যান শানাকা।

ছবি: সংগৃহীত

শেষ ওভারে লঙ্কানদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৯ রান। বল হাতে নেন প্রথম ২ ওভারে ২৬ রান দেয়া কেন রিচার্ডসন। স্নায়ুচাপে ভুগেই হয়তো প্রথম দুই বলেই ওয়াইড দিয়ে বসেন তিনি। পরের দুই বলে আসে মাত্র ১টি সিঙ্গেল ও লেগবাই। শেষ ৪ বলে দরকার ১৫, এমন অবস্থায় স্ট্রাইকে গিয়ে ফের ঝড় তোলেন শানাকা। টানা ২ বাউন্ডারিতে সমীকরণকে নিয়ে আসেন তিনি ২ বলে ৭ রানে। কেন রিচার্ডসনের ৫ম বলটি ছিল ফুলটস। সেটিকে সপাটে কমেন্ট্রি বক্সের দিকে আছড়ে ফেলেন খুনে মেজাজে থাকা শানাকা। অ্যারন ফিঞ্চ কেবল তাকিয়ে দেখলেন, ১ বলে ১ রানের সমীকরণ কীভাবে ওয়াইড দিয়ে শেষ করে দিলেন কেন রিচার্ডসন। উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড থ্রো করায় শানাকা ও করুনারত্নে দৌড় দিয়েছিলেন। তবে ম্যাচ যে শেষ তার আগেই! অবশ্য, শেষ ওভারে ৩টি ওয়াইড দেয়ায় কেন রিচার্ডসনের দোষ হয়তো কেউই দেবে না। কচুকাটা করতে থাকা মারমুখী শানাকার ঝড়ে যে এলোমেলো হয়ে গেছে অজিদের কৌশল আর বোলারদের লাইন-লেংথ!

আরও পড়ুন: সিরিজ হারলেও শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের হাসালেন অধিনায়ক

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply