তিস্তা অববাহিকার বন্যার্তদের খাদ্য সংকট চরমে

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

গজলডোবার গেট খুলে দেয়ায় উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে তিস্তা অববাহিকায় শুরু হওয়া বন্যার্তদের মধ্যে খাবারের তীব্র সংকট বেড়েছে। সরকারি তরফে যে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

এদিকে শনিবার (১৮ জুন) বিপদসীমার নীচে থাকলেও আবারও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলের কারণে ডালিয়া ব্যাজার পয়েন্টে তিস্তার পানি শনিবার বিকেল তিনটায় ২৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হলে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে আবারও বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে তলিয়ে যাওয়া রংপুরের গঙ্গাচড়ার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, সদর, গজঘন্টা ও মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়া, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বলপুর ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি।

হাজার হাজার বাসাবাড়িতে হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি। দুর্গতরা বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবারের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে লক্ষিটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি এলাকায় শুক্রবার যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। শনিবার দুপুরে বন্যাকবলিত লক্ষিটারি ইউনিয়নের বাগেরহাট-ইচলি এলাকার লিপি বেগম জানান, আমার ১২ টা গরু। তিনদিন আগে উঁচুতে এক বাড়িতে রাখছিলাম। এখন তারা আর রাখতে দেয় না।

লক্ষিটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, বিপদসীমার ওপরে যাওয়ায় আমরা মাইকিং করে যারা বৃদ্ধ নারী এবং শিশু আছে, তাদেরকে আমরা রেসকিউ করে নিরাপদ স্থানে এনেছি। আমার ইউনিয়নের ৫ টি ওয়ার্ডের ইতোমধ্যেই ১০ হাজার বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

তিনি স্বীকার করে বলেন, আমরা যতটুকু সহযোগিতা করেছি তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৬ টি ওয়ার্ডের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের সংকট বিরাজ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা তাদেরকে কিছুই দিতে পারি না।

নোহালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল জানান, ওই ইউনিয়নের ১৬ হাজার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের খাবারের তীব্র সংকট বিরাজ করছে।

মর্নেয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার মানুষ পাবিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিনিও এখন পর্যন্ত কাউকে কোনো খাদ্য সহায়তা দিতে পারেন নি।

গজঘন্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, প্রতিদিনই তার ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। মানুষ পানিবন্দী হচ্ছে। বাদামের সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নি।

এদিকে কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, বন্যা আর ভাঙ্গন আমার ইউনিয়নের ২ হাজার পরিবারকে এখন আকড়ে বসে আছে। আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা এবং নদীপাড়ের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ায় নিলফামারীর ডিমলার ছাতনাই এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারি, এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে।

কোথাও কোথাও কোনো কোনো বাড়িতে কোমর অবদি পানি ঢুকেছে। এসব এলাকার উঠতি বাদাম, আমনের চারা, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। দুর্গত এলাকায় মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন। কোথাও কোনো সহযোগিতা পৌঁছেনি। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট চরমে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে গেরস্তরা।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply