সিলেট, সুনামগঞ্জের পর প্লাবিত হবিগঞ্জ; গ্যাস সংযোগ বিঘ্নিত হবে না বলে দাবি

|

সিলেট, সুনামগঞ্জের পর বানের জলে ভাসছে হবিগঞ্জ। খাবার আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাহাকার বানভাসীদের মাঝে। বৃষ্টি কমলেও সড়ক ও বাসাবাড়িতে এখনো রয়েছে হাটুপানি। উপজেলাগুলো ভাসছে বানের পানিতে। আশ্রয়কেন্দ্রেও নেই জায়গা। দেশের সবচেয়ে বেশি গ্যাসক্ষেত্র সমৃদ্ধ সিলেট বানের পানিতে ভাসলেও গ্যাস সংযোগে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বানভাসী মানুষ জানান, তারা ত্রাণ সহায়তা পাননি। ২-৩ দিন যাবত খাদ্যাভাবে আছেন তারা। ঘরবাড়ি, গবাদিপশু হারিয়ে দিশেহারা তারা। স্থানীয়রা জানান, গতকালের চেয়ে আজকের (১৯ জুন) বন্যা পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো। তবে এই অবস্থাকে সন্তোষজনক বলার সুযোগ নেই। আজ ভারী বর্ষণ না হওয়ায় পানি নেমে যাওয়া শুরু হয়েছে, এবং এই ঘটনাকে স্থানীয়রা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি বলে অভিহিত করছেন।

সিলেটের সাথে রেল যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে স্থলপথে সিলেট প্রবেশ করা এখনও দুরূহ, কারণ স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (সিলেট) এর প্রধান প্রকৌশলী দাবি করেছেন, সিলেট জেলার ৮০ শতাংশ বিদ্যুতের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। আরে সুনামগঞ্জে ডিসি অফিস এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু যে স্থানে রয়েছে, কেবল সেখানেই বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো সম্ভব হয়েছে। তবে যেহেতু বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোর অনেকটা অংশ এখনো পানির নিচে রয়েছে, তাই সুনামগঞ্জের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি।

বাংলাদেশের প্রথম গ্যাসক্ষেত্র হরিপুর থেকে শুরু করে রশিদপুর কৈলাসটিলা, বিবিয়ানাসহ অসংখ্য গ্যাসক্ষেত্রই সিলেটে অবস্থিত। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, গত রাতেই পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে একটি কো-অর্ডিনেশন মিটিং হয়েছে। আজ একটি গ্যাসক্ষেত্রকে তারা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তবে বাকি গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় যদি পানিও ওঠে, গ্যাস যে প্রক্রিয়ায় উত্তোলন করা হয় এবং জাতীয় গ্রিডের সাথে গ্যাসক্ষেত্রগুলো যেভাবে পাইপের মাধ্যমে সংযুক্ত তাতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না বলেও তারা এখনো বিশ্বাস করেন।

দুর্ভোগ কমেনি সুনামগঞ্জে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির হাহাকার জেলাজুড়ে। এখনও অনেক এলাকা জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও ভয়াবহ দুর্ভোগ। এদিকে, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকা। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, সুনামগঞ্জের সদরেও যাওয়ার উপায় নেই। সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো এখনো যোগাযোগবিহীন। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে বানভাসীরা। আশ্রয়কেন্দ্রে আনা গেলেও খাদ্য আর সুপেয় পানি বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

এদিকে, সিলেট-সুনামগঞ্জের পর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাধ উপছে হুহু করে ঢুকছে বানের পানি। পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ৯৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। তারা উদ্ধারকার্য চালানোর কৌশল এবং কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা যাচাই করে দেখছে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply