সবাইকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মুক্তামণি

|

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বিরল রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামণির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৩ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা শেষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাদার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এ সময় মুক্তামণির বাবা-মাসহ প্রতিবেশিদের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরহাদ জামিলসহ স্থানীয় গ্রামবাসী তার জানাজায় অংশ নেন।

এর আগে মুক্তামনিকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শাহ আব্দুল সাদী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার।

বুধবার (২৩ মে) সকাল ৮টার কিছুক্ষণ আগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে না ফেরার দেশে চলে যান মুক্তামণি। গত কয়েকদিন ধরেই জ্বরে আক্রান্ত ছিলো সে। তার অস্ত্রোপচার হওয়া হাতটি ফুলে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিলো। কথা বলতেও পারছিলো না শিশুটি। মুক্তামণির ক্ষতস্থানে নতুন করে পচন ধরেছিলো। আক্রান্ত ডান হাত থেকে বেরিয়ে আসছিল সাদা পোকা আর রক্ত।

প্রাণপ্রিয় মেয়ের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বাবা ইব্রাহিম হোসেন ও তার মা আসমা খাতুন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। মেয়ের মৃত্যুর পর এখন আর কিছুই চাওয়ার নেই উল্লেখ করে মুক্তামণির শোকার্ত বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ওর জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন। এমন কোনো কিছু নেই যা সরকার করেনি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন মাগফিরাত কামনা ছাড়া আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই।

জন্মের দেড় বছর পর শিশু মুক্তামণির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। মুক্তামণির আক্রান্ত ডানহাত ছোট আকারের গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে প্রচণ্ড ভারী হয়ে ওঠে। এতে পচন ধরে পোকাও জন্মে। দিন-রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকতো শিশুটি। আক্রান্ত স্থান থেকে গন্ধ বের হতো। এ রোগ তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছিলো। গত বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণির সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।

এরপর ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় মুক্তামণিকে। সেখানে চিকিৎসার জন্য গঠিত হয় বোর্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ধরা পড়ে মুক্তামনির হাত রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত। তারপর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয় তার হাতের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক মাসের ছুটিতে বাড়ি নেওয়া হয় মুক্তামণিকে। এরপর বাড়িতেই চলছিলো তার চিকিৎসা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply