কারো প্রতি অভিযোগ নেই, আজ থেকে তারা আত্মবিশ্বাসী হোক: প্রধানমন্ত্রী

|

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


নানা বাধা ও ষড়যন্ত্র পেরিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণযাত্রা শেষে উদ্বোধন পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, আমাদের অহংকার। আজকের দিনে কারো প্রতি আমার অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই। তাদের হয়তো আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। আশা করবো আজকের পর থেকে তারা নতুন করে আত্মবিশ্বাসী হবে।

শনিবার সকালে মাওয়াপ্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটি ব্যাংকের এমডির বয়সসীমা শেষ হয়ে যাওয়া তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে এটা আটকাতে চেয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনলো। মামলা করলো। কানাডার আদালতে সে মামলা বাতিল হয়ে গেলো।

সে সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই জানেন, যখন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করি তখন অনেক ষড়যন্ত্র হয়। মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয় দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে একেকটা মানুষ একেকটা পরিবারকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। সেই যন্ত্রণা ভোগ করেছে রেহানা, জয়, পুতুল, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকি। আমার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, পদ্মা সেতুর নির্মাণের কাজে যাকে আমরা উপদেষ্টা হিসেবে বিশেষভাবে দায়িত্ব দিয়েছিলাম ড. মশিউর রহমান, সাবেক যোগযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ যাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে আমি তাদের প্রতি ও তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। তখনকার সচিবসহ নানা জনকে অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

জনগণকে স্যালুট জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণ করা আমার দায়িত্ব। অপবাদ দিয়ে লাভ নাই
দেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা; তাই বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট জানাই। যারা সমালোচনা ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এটাই আমার আশা। আমি কারো প্রতি অভিযোগ করছি না, অনুযোগও রাখছি না। তাদের হয়তো আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। আজ থেকে তারাও নতুন করে আত্মবিশ্বাসী হবে এই আশা করছি।

ভাষণে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ যাদের অবদান রয়েছে তাদের সবাইকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ধন্যবাদ জানান পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষকে। বলেন, নির্দ্বিধায় তারা তাদের জমি ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের ত্যাগ না থাকলে এই সেতু নির্মাণ কঠিন হয়ে যেতো। তাদের সবাইকে আমরা পুনর্বাসন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি আজ গর্বিত। আমিও আনন্দিত ও গর্বিত। অনেক বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণে সক্ষম হয়েছি। এই সেতু শুধু সেতু নয়। শুধু দুই পারের বন্ধন সৃষ্টি করছে। আমাদের অহংকার, আমাদের সক্ষমতার প্রতীক, আমাদের গর্ব, এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িত আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃষ্টিশীলতা, আমাদের সহনশীলতা ও আমাদের প্রত্যয়। যদিও ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণে আমাদের দুই বছর বিলম্ব হয়েছে। আমরা কখনো হতাশায় ভুগিনি, আত্মপ্রত্যয় নিয়ে চলেছি। শেষ পর্যন্ত সমস্ত অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেছেন কেউ দাবায় রাখতে পারবা না, কেউ দাবায় রাখতে পারেনি। আমরা মাথা নোয়াবো না, আমরা মাথা নত করি নাই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply