ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
শ্রমিক-কর্মচারী পাবে ৪ মাসের বেতন-ভাতা বাবদ ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আর চিনিকলে মজুদ রয়েছে ৩৬ কোটি টাকার ৬ হাজার মেট্রিক টন চিনি কিন্তু চিনি বিক্রি না হওয়ায় মাসের পর মাস বকেয়া থেকে যাচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস। এসবের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সমাবেশ, কর্মবিরতি করেছে শ্রমিকরা।
চিনিকলে কর্মরত ফিরোজ জানান, গত ৪ মাসে কোন টাকা পায়নি তারা। সামনে ঈদ, শুরু হয়েছে রমজান অথচ কবে পরিশোধ করা হবে তাদের টাকা-পয়সা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই কর্মকর্তাদের কাছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা তো বটেই চিনিকলের নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারগন দেদারসে বিভিন্ন কোম্পানীর চিনি বিক্রি করলেও বছরজুড়েও ডিলাররা ১ কেজি চিনিও উত্তোলন করছে না চিনিকল থেকে। কর্মচারী আর মৌসুমী শ্রমিক মিলে ৯ শতাধিক মানুষের এমন বেহাল দশা, ধার-কর্জ আর দেনায় চলে তাদের সংসার, মুজুরী কমিশন না থাকার ক্ষোভের কথাও জানালেন তিনি।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল সূত্রে জানা যায়, এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি চিনিকল। চিনিকল এলাকায় আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৫শ একর ধরা হলেও অর্ধেকে নেমে চাষ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৩শ ৭০ একর জমিতে। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠানটি চিনি উৎপাদন কারখানা, বাণিজ্যিক খামার, জৈব সারকারখানা এবং অফিস, বিদ্যালয়, অতিথি ভবন ও আবাসন ভবনের সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু এভাবে বছরের পর বছর লোকসান গুণছে অর্ধ শতাব্দির পুরাতন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী মোবারকগঞ্জ চিনিকল।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল হালিম জানান, ২ ছেলে আর স্ত্রী মিলে তার সংসার। ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকুরী মোবারকগঞ্জ চিনিকলে। কিন্তু মাসের পর মাস বকেয়া পড়ে থাকে বেতনের টাকা। কিভাবে চলছে সংসার এমন প্রশ্নে চোখে-মুখে হতাশা এনে বললেন, দেনা আর সুদে করে টাকা এনে সন্তানদের পড়াশোনা আর সাংসারিক খরচ চালাতে হয়।
শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম জানান, সরকারি নজরদারীর অভাব,বাজার ব্যবস্থায় মনিটরিং না থাকা ও বে-সরকারি চিনিকলগুলো একচাটিয়া বানিজ্যিক মনোভাবের কারণেই এত কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত ও শ্রমিকদের না খেয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে ।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার অধীর কুমার শিকদার জানান, খোলাবাজারের চিনির দাম কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা কম, এছাড়া এসব চিনি সাদা, ঝকঝকে তাই ডিলার হলেও মিলের চিনি উত্তোলন করতে পারছেন না।
ঝিনাইদহ মোবারকগঞ্জ চিনিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ আলী শিকদার জানান, চিনিকলের দৈন্যদশা চলছে। ৪/৫ টি বেসরকারি কোম্পানি বিদেশ থেকে র-সুগার এনে রিফাইনিং করে বাজারে ছাড়ে, তারা চায় সরকারি চিনিকলগুলো লস হোক এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারা।
এছাড়া ডিলাররা চিনি উত্তোলন ও বিক্রি না করায় বাজারমূল্যে তফাৎ বেড়েই যাচ্ছে এতে চিনিকল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যারা চিনি উঠাচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সদরদফতরে জানানো হয়েছে।
এছাড়া চিনি বিক্রয়ে প্যাকেটজাত ব্যবস্থা করা হয়েছে যা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে এতে চিনি বিক্রি বেড়ে যাবে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
Leave a reply