৬ বছর আগে ঘটেছিল গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা। এখনো সে রাতের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রথম অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা। শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন কেউ কেউ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হলি আর্টিজানের মতো এমন ঘটনা আর ঘটাতে পারবে না জঙ্গিরা। হামলা মামলায় সাত জঙ্গির ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়নি এখনও।
২০১৬ সালের ১ জুলাই নির্মম এক জঙ্গি হামলার সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে রাতে আচমকা হামলা চালায় ৫ জঙ্গি। এতে ২ পুলিশ কর্মকর্তা, ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি নাগরিকসহ নিহত হন ২২ জন। রাতভর আতঙ্কের পর ভোরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ৫ জঙ্গি। ওই রাতে গুলশান এলাকায় কলসাইন কিলো পার্টির দায়িত্বে ছিলেন উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন। টিম নিয়ে সর্বপ্রথম ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। তাদের দেখার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেড ছোঁড়ে জঙ্গিরা। এরপর টানা ২০ মিনিট জঙ্গিদের সাথে গোলাগুলি করে, তাদেরকে বেকারির ভেতর আটকে রাখেন তিনি।
ডিএমপির উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন বলেন, গাড়ি নিয়ে পৌঁছুলাম। গেটের সামনে যেতেই ভেতর থেকে গ্রেনেড চার্জ করা হয়। আর্মস নিয়ে আমি আড়ালে চলে যাই, গোলাগুলিতে লিপ্ত হই। আমি একটার পর একটা গুলি করছিলাম, যাতে ওরা আর আমাদের ওপর গ্রেনেড চার্জ করতে না পারে। ভেতরে মানুষের দৌড়ঝাঁপ, মানুষের কান্নার রোল আমি শুনতে পাচ্ছিলাম।
তৎকালীন গুলশান থানার পরিদর্শক ও বর্তমানে পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, কমিশনার স্যার, ডিসি স্যারসহ আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখার জন্য একটু সামনে অগ্রসর হলেন। তখন আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। অনেকেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। প্রত্যেকের গায়ে স্প্লিন্টারের চিহ্ন, শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। পায়ে আঘাতের চিহ্ন। প্রত্যেকে শুয়ে বসে কাতরাচ্ছে। এই বীভৎস অবস্থা কেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না।
তৎকালীন গুলশান বিভাগের এডিসি ও বর্তমানে মতিঝিল বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, গ্রেনেড ছোঁড়ার পর আর কিছুই মনে করতে পারি না। শরীরে ১০টা স্প্লিন্টার রয়েছে। আমি দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছি। সেই রাত ছিল বিভীষিকাময় রাত।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বলছে, ওই ঘটনার ৬ বছর পর বড় কোনো জঙ্গি হামলার সক্ষমতা এখন আর নেই। দু’একটি জঙ্গি সংগঠন শুধু অনলাইনে সক্রিয়। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিদের এখন প্রত্যক্ষ সক্রিয়তা নেই। করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে তাদের সক্রিয়তা দেখা গেছে। সেটাও এখন অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে। তারপরও যে কিছু তৎপরতা নেই, তা নয়। তারা ডার্ক ওয়েবে, ডিপ ওয়েবে নিজস্ব কমিউনিটিতে প্রচার প্রচারণা হয়তো চালায়। কিন্তু তা বড় মাত্রায় শঙ্কার কারণ নয়।
২০১৯ সালে হলি আর্টিজানে হামলা মামলার রায়ে ৭ আসামীর ফাসি হয়। কিন্তু রায় কার্যকরে উচ্চ আদালতে এখনো শুরু হয়নি বিচারকাজ। অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন বলেন, মৃত্যদণ্ডাদেশের মামলাগুলো উল্লেখ করা হয় না। সেগুলো মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় একের পর এক পাঠাচ্ছেন বেঞ্চগুলোতে। সেক্ষেত্রে, মামলাটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন শুনানি করা হয়, সেজন্য আমরা দরখাস্ত ফাইল করবো।
শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রায় কার্যকর গুরুত্ব বহন করে। তাই উগ্রবাদ নিয়ে কাজ করা সবপক্ষের আশা, দ্রুত কার্যকর হোক হলি আর্টিজান মামলার রায়।
/এম ই
Leave a reply