সাদা মানিককে বিদায় দিতে শত শত মানুষের ভিড়

|

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

গ্রামের শত শত মানুষ সাদা মানিককে বিদায় জানাতে রাস্তার দু-ধারে দাঁড়িয়ে আছে। এ যেন এলাকার সু-পরিচিত বিখ্যাত কোনো ব্যাক্তিকে গ্রাম থেকে বিদায় জানানো হচ্ছে। এসময় গ্রামের ছোট-বড় নারী- পুরুষের চাহনি শুধুই সাদা মানিকের দিকে। সাদা মানিকও হেলেদুলে গ্রামের মেঠো পথ ধরে এদিক ওদিক
তাকিয়ে এগিয়ে চলেছে।

সাদা মানিক কোনো ব্যক্তির নাম না। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের দিনমজুর ময়নদ্দিন মন্ডলের শখের পোষা গরুর নাম সাদা মানিক।

গ্রামের কৃষি দিনমজুরের টিনের চালার ঘরে বেড়ে উঠেছে সাদা মানিক। মাথার দুইপাশে কালো এবং পুরো শারীর ধবধবে সাদা, খাড়া দু’টি শিং, একটু দুষ্টু স্বভাবের ও প্রভুভক্ত। এ কারণে আদর করে নাম রাখা হয়েছে সাদা মানিক।

নিজের পোষা গুরু বিক্রি করে, পাশের গ্রাম থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড় গরুটি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় কেনেন সদর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কৃষি দিনমজুর ময়নদ্দিন মন্ডল।

তিন বছরে সাদা মানিকের হয়েছে বিশালাকারের একটি দেহ। দৈর্ঘ্যে ১১ ফুট, ৬ ফুট উচ্চতা এবং গোলাকার ৯ফুট সাদা মানিকের ওজন প্রায় ৩২-৩৩ মন। দিনমজুর ময়নদ্দিন এই গরুটির দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা।

সরোজমিনে দেখা যায়, গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেলেদুলে সাদা মানিক ঢাকার উদ্দেশে অপেক্ষমান ট্রাকের দিকে আসছে। সে সময় তাকে দেখতে গ্রামের শত শত মানুষ রাস্তার দুই ধারে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে যে সবথেকে বেশি দেখাশোনা করত ময়নদ্দিনের স্ত্রী আনজিরা খাতুন তিনিও বিদায় জানাতে
১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তার সাথে এসেছেন। সাদা মানিককে ঢাকার গাবতলি বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পাশের গ্রামের জামাল বিশ্বাস জানান, তাদের পাশের গ্রামের ময়নদ্দিন গরিব মানুষ, সে দিনমজুর কৃষি কাজ করে। শখ করে একটি গরু পালন করেছে। তার গরুর মতো এমন গরু আশে পাশের কোনো গ্রামে আর নেই। তার যে গরু সেই হিসেবে স্থানীয় বাজারে দাম পাচ্ছে না। যার কারণে সে তার গরুটাকে ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তার গরুটি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারে।

ময়নদ্দিনের স্ত্রী আনজিরা খাতুন জানান, তিনি একবছর ধরে এই গরুটা লালন পালন করছেন। তার গায়ে কখনো ময়লা হতে দেয়নি। দিনে তিন বার গোসল করানো হতো। তাকে শুধু মাঠের কাঁচা ঘাস, বাড়িতে উৎপাদিত গম, ছোলা ও ধান খাওয়ানো হতো। গরিব হওয়ায় ভালো কোনো খাদ্য খাবার খাওয়াতে পারেনি। এখন এই গরুটি বিক্রি করে নিজেদের সংসারের খরচ এবং আরও দুইটা গরু কেনার আশা তার। তাকে বিদায় দিতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারপরও তাকে বিক্রি করতে হবে।

দিনমজুর ময়নদ্দিন বলেন, এক বছর আগে নিজের বাড়িতে পোষা একটি ষাঁড় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করি এবং দুইটা ছাগল বিক্রি করে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় গরুটি পাশের গ্রাম থেকে কিনি। তখন গরুটির বয়স ছিল দুই বছর এবং ওজন ছিল ১০ মন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর প্রাকৃতিক উপায়েই তাকে খাওয়ানো হতো।

তার খাবারের তালিকায় ছিল ছোলা, গম, ভুট্টা, ধান এবং কাঁচা ঘাস। গরিব মানুষ হওয়ায় বাজারের দামি কোনো খাবার খাওয়াতে পারেননি। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করতে কোনো ঔষধও খায়ানো হয়নি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার বলেন, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় কোরবানির জন্য ৮৬ হাজার গরু ও ১ লাখ ৯ হাজার ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এদিকে পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে খামারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply