একের পর এক বিয়ে করে টাকা আত্মসাৎই নেশা কনস্টেবল শামীমের!

|

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শামীম হোসেন নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে চারটি বিয়ে করে স্ত্রীদের থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নানা কৌশলে চাপের মুখে রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীকে রেখে বর্তমানে চতুর্থ স্ত্রীর সাথে সংসার করছেন তিনি। বাকি তিন স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক না রাখায় বিক্ষুব্ধ হয়ে তারা একযোগে বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। প্রতারণার স্বীকার তিন স্ত্রীকেই আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের পিপির।

সিরাজগঞ্জরে শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামের সাথী খাতুন বিথীর সাথে আলোকদিয়ার গ্রামের শামীম হোসেনের ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে নগদ ৮ লক্ষ টাকা যৌতুক ও আসবাবপত্র প্রদানের মধ্যে দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেই অবস্থান করতে থাকেন বিথী। বিয়ের চার মাস পর বিথী গর্ভধারণ করলে পার্শ্ববর্তী শাকতোলা গ্রামে বাবার ভাড়া বাসায় অবস্থান করতে থাকেন বিথী। এর মধ্যে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হলে কনস্টেবল শামীম বিথীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

বেশ কিছুদিন পর বিথী জানতে পারেন তার স্বামী ঢাকা উত্তরার হাসিনা আক্তার হাসি খাতুনকে বিয়ে করেছেন। তার নিকট থেকে তিন দফায় পদোন্নতির কথা বলে ২৪ লাখ টাকা নেন শামীম। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গেলে বিথী ও তার মাকে ব্যাপক মারপিট করে তাড়িয়ে দেন শামীম।

এ ঘটনার দুই বছর পর শামীম নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ক্যামিলি আক্তারকে বিয়ে করে তাকে নিয়ে সংসার করতে থাকেন। তার কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা নেন এই কনস্টেবল।

এক পর্যায়ে প্রথম স্ত্রী বিথিকে ডিভোর্স দেনে শামীম। এ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলে পুনরায় বিথীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে সংসার করতে থাকেন তিনি। এরপর শামীম পাবনা পুলিশ লাইনে বদলি হয়ে ঢাকার এক নারীকে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে তাকে নিয়েই সংসার শুরু করেন।

এদিকে ৫ বছর বয়সী মেয়ে ফারিয়াকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিথী। আর কোনো পথ না পেয়ে বিথী বাদী হয়ে পুলিশের আইজি ও পুলিশ সুপার, পাবনা বরাবর গত ১৭ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগে অপর দুই স্ত্রী সাক্ষী হয়ে অভিযোগকে আরও জোরালো করে তুলেছে।

শামীমের ২য় স্ত্রী হাসিনা আক্তার হাসি বলেন, পদোন্নতির কথা বলে মোটর বাইকসহ নগদ ২৪ লাখ টাকা নিয়েছে আমার কাছ থেকে। এরপর আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে নাটোরে আরেকটি বিয়ে করে শামীম।

এদিকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বললে ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি পাওয়ায় গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চান না শামীমের ৩য় স্ত্রী ক্যামেলি আক্তার।

এ ব্যাপারে কনস্টেবল শামীমের সাথে কথা বলতে যাওয়া হয় পাবনা পুলিশ লাইনে, বেড়া সার্কেল অফিসে ও তার নিজ বাড়ী আলোকদিয়ার গ্রামে। কিন্তু শামীম ও তার ভাই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন।

ইতোমধ্যেই পাবনার সহকারী পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) অফিসে তিন স্ত্রীর দেয়া অভিযোগ তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনুমতি না থাকায় ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি নন বেড়া সার্কেল এসপি পল্লোল কুমার দত্ত।

সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ লাভলু বলেন, প্রতারক যেই হোক না কেন অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল থেকে প্রতারিত হওয়া এই তিন ভুক্তভোগীকেই সহায়তা প্রদান করবো।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply