এ বছরের জেএসসি এবং আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকছে। তবে আগামী বছরের জেএসসিসহ অন্য পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় এমসিকিউ তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
শিগগিরই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে কোনো মৌলিক সিদ্ধান্ত সংযোজন-বিয়োজনের ঘোষণার আগে একটি যৌক্তিক সময় দিতে হয়।
আসন্ন জেএসসি-জেডিসিতে এমসিকিউ বাতিলের ঘোষণাটি দেয়ার সে সময়টা এখন আর নেই। তবে ভবিষ্যতে এমসিকিউ না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সে ঘোষণা যথাসময়ে দেয়া হবে।
সোমবার জাতীয় কারিকুলাম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আসন্ন জেএসসি পরীক্ষায় বিষয় ও নম্বর কমানোর ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রস্তাবের ওপর দীর্ঘ আলোচনা হয়।
আলোচনা শেষ না হওয়ায় সভা মুলতবি করা হয়। ৩১ মে এনসিসিসির সভা পুনরায় বসবে। সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সোহরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষার্থীরা সারা বছর পড়ালেখা করে কী বুঝেছে, তা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
সেখানে এমসিকিউর মাধ্যমে তা মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। তার ওপর এমসিকিউ নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সব কিছু আমলে নিয়ে আমরা এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নতুনভাবে ভাবছি। এ পদ্ধতি তুলে দিয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে লিখিতভাবে পাবলিক পরীক্ষাগুলো আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, পুরনো পদ্ধতিতে আরও এক বছর পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তারপর এমসিকিউ তুলে দিয়ে সম্পূর্ণ লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার আয়োজন করা হতে পারে।
সচিব বলেন, নতুনভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না। বরং নতুনভাবে কারিকুলাম সংশোধন করে চাপ কমিয়ে আনা হবে। সিলেবাসও কিছু কমিয়ে আনা হবে।
উল্লেখ্য, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ে দুইপত্রের পরিবর্তে একপত্র পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। সে অনুযায়ী উভয় বিষয়ে ১০০ নম্বর কমানো হবে।
এ প্রস্তাব এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মেনে নিয়েছে। সে অনুযায়ী কারিকুলাম ও সিলেবাস ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কেননা ১০০ নম্বরে সিলেবাস ছোট হবে। সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) যে প্রস্তাব এনসিসিসিতে উত্থাপন করে, তার ওপর মতামত দেন সদস্যরা। সে অনুযায়ী সিলেবাস চূড়ান্ত করে পরবর্তী সভায় তুলে ধরা হবে।
এ প্রসঙ্গে সোহরাব হোসাইন দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, আগে বাংলা-ইংরেজিতে ১৫০ নম্বর করে পরীক্ষা হতো। সেজন্য ১৫টা পশ্ন পড়তে হতো, এখন দুটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে ১০টি প্রশ্ন পড়তে হবে। জেএসসি-জেডিসি পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে এ পর্যায়ে নতুনভাবে কারিকুলাম তৈরির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, পরীক্ষায় বাংলা ও বাংলা ব্যাকরণ বিষয়ে ২০০ নম্বর থেকে ৫০ কমিয়ে ১৫০ এবং ইংরেজি প্রথমপত্র ও ইংরেজি ব্যাকরণ বিষয়ে ২০০ নম্বর থেকে ৫০ কমিয়ে ১৫০ নম্বর করা হবে।
কমানো নম্বর অনুপাতে এ স্তরের সিলেবাসও কমিয়ে আনা হবে। সে কাজই চলছে।
উল্লেখ্য, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় সাতটি বিষয়ে মোট ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে চতুর্থ বিষয়সহ ১০টি বিষয়ে মোট ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, জেএসসিতে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলে ১০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা হবে। ইংরেজিতেও দুই পত্র মিলে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এখন দুই পত্রের জন্য দুটি পরীক্ষা হয়, দুটি পত্র মিলিয়ে মোট নম্বর থাকে ১৫০।
প্রস্তাব অনুযায়ী, চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তবে গণিত, ধর্ম, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা আগের মতো আগের নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষা থেকে তুলে দেয়া হবে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন। (সূত্র: যুগান্তর)।
Leave a reply