স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:
হাজার হাজার রাজনৈতিক সহকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্বজন, শ্রমিক এবং প্রান্তিক সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শেষ বিদায় নিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বরেণ্য শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা।
রোববার (২৪ জুলাই) বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে জাতীয় পার্টি রংপুর বিভাগ একজন কর্মীবান্ধব রাজনৈতিক অভিভাবকের পাশাপাশি সমাজহিতৈষী এক নেতাকে হারালো, বলে মন্তব্য করেছেন জানাযায় অংশগ্রহণকারীরা।
রোববার বাদ আসর হারাগাছ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শোকার্ত মানুষের ঢলে; উপলক্ষ সাবেক এমপি করিম উদ্দিন ভরসার জানাযায় অংশগ্রহণ। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, হারাগাছ পৌর মেয়র এরশাদুল হক এরশাদ, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুর রাজ্জাক, কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, পীরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাছের মো. মাহবুবুর রহমান, রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনসহ জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, বাসদের মূল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর পাশাপাশি কাউনিয়া ও হারাগাছের বিভিন্ন বয়েসী ও শ্রেণিপেশার প্রায় ৩০ হাজার পেশার মানুষ জানাযা ও দাফনে অংশ নেন।
জানাযার আগে আলোচনায় অংশ নেন তার স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং গুণীজনেরা। নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাযায় উপস্থিত প্রান্তিক সাধারণ মানুষরা বললেন, দেশের বরেণ্য শিল্পপতি এবং তিনবারের এমপি হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাধারণ মানুষের সাথে মিশেছেন একেবারে সাধারণ হিসেবে। তার মৃত্যুতে অভিভাবক হারালো হারাগাছসহ এ অঞ্চলের প্রান্তিক দুস্থ মানুষ।
জানাজায় অংশ নিয়ে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, তার মৃত্যুতে এক রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হলো। অভিভাবকশূণ্য হলেন রাজনৈতিক নেতারা।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, করিম উদ্দিন ভরসা ছিলেন রংপুর অঞ্চলের জাতীয় পার্টির অভিভাবক। এমন অভিভাবক হারানোয় অনেক বড় শূন্যতা তৈরি হলো দলটিতে। যা কখনও পূরণ হবার নয়। এখন তার কর্ম ও আদর্শ প্র্রতিপালনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেয়া আমাদের বড় কর্তব্য ও দায়িত্ব হয়ে দাড়ালো।
এর আগে, শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক এ এমপি। এ সময় তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিড়ি-সিগারেট ও ম্যাচ ফ্যাক্টরি, কাগজ মিল, কোল্ড স্টোরেজ, হাউজিং, ইমপেক্স, আরকে ফ্যানসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা গড়েছিলেন তিনি। সেখানে এসব কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন।
জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় ‘হামার সরু সড়ক চ্যাপটা করি দাও বাহে স্পিকার’ বক্তব্য দিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। তার মৃত্যুতের শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো রংপুরে। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর-৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদসহ রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, প্রেসক্লাব, ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ি, পেশাজীবি, শ্রমজীবিসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং মরহুমের প্রতিষ্ঠিত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিকবৃন্দ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে।
/এসএইচ
Leave a reply