মহানায়ক উত্তম কুমার স্মরণে

|

সত্যজিৎ রায়ের 'নায়ক' সিনেমার একটি দৃশ্যে মহানায়ক উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর।

বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী অভিনেতা মহানায়ক উত্তম কুমার। সদা মায়াময় হাসি আর প্রাণবন্ত অভিনয়ের এ জাদুকর বাংলা চলচ্চিত্র জগতে খ্যাতি পেয়েছেন ‘মহানায়ক’ হিসেবে। তিনি একাধারে ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। আজ মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে যমুনা নিউজ মহানায়ককে স্মরণ করছে গভীর শ্রদ্ধায়। 

১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার আহিরীটোলায় সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং চপলা দেবীর ছোট্ট সংসারে জন্ম নেয় অরুণ। সেই অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়ই পরবর্তীতে বাংলার সিনেপর্দা কাঁপিয়ে হয়ে ওঠেন মহানায়ক উত্তম কুমার। চলচ্চিত্রে পা রেখে নিজের নাম পাল্টে তিনি হয়ে উঠেন উত্তম কুমার। কারণ তিনি জানতেন, চলচ্চিত্রে তিনি উত্তম-ই হবেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের হাল ধরার জন্যে গ্র্যাজুয়েশন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে মাত্র ২৭৫ টাকা বেতনে কেরানির চাকরি শুরু করেন অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে কী? তার ভেতরে সুপ্ত ছিল অভিনয়।  

রূপালি পর্দায় উত্তম কুমারের শুরু ‘মায়াডোর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত মুক্তি পায়নি সিনেমাটি। এরপর প্রথম সিনেমা হিসেবে ‘দৃষ্টিদান’ মুক্তি পেলেও উত্তমের ওপর খুব বেশি দৃষ্টি পড়লো না কারোরই।

এরপর মুক্তি পাওয়া ‘বসু পরিবার’ সিনেমা দিয়ে খানিকটা পরিচিতি পান তিনি। তবে ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ঝড় তোলেন উত্তম কুমার। আর এ সিনেমার মধ্য দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্র পায় তার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল জুটির দেখা; শুরু হয় উত্তম-সুচিত্রা যুগ। পঞ্চাশ ও ষাটের দশক মানেই ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া-পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ আর ‘সাগরিকা’র মতো কালজয়ী সব সিনেমার পরিচিত ও আকাঙ্খিত মুখ ছিলেন উত্তম-সুচিত্রা জুটি।    

উত্তম কুমার শুধু যে বাংলা সিনেমায়ই অভিনয় করেছেন তা কিন্তু নয়। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও উত্তম কুমার অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’–তে।    

১৯৬৭ সালে ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন উত্তম কুমার। এছাড়া তিনি নিউইয়র্ক, বার্লিনসহ বিভিন্ন সম্মানজনক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অতিথি হওয়ার সম্মানও অর্জন করেছেন। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তম পেয়েছেন বহু পুরস্কার। পরবর্তীতে উত্তম কুমারের শ্রদ্ধার্ঘ্যে কলকাতা মেট্রো টালিগঞ্জ অঞ্চলের স্টেশনটির নামকরণ করা হয় ‘মহানায়ক উত্তম কুমার মেট্রো স্টেশন’। 

উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও ছিলেন সফল। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’ এবং ‘শুধু একটি বছর’র মতো সিনেমা পরিচালনা করেছেন তিনি।

পর্দায় উত্তম কুমার হয়েছেন অনেক অভিনেতাই। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সৌমিক সেনের ‘মহালয়া’। যেখানে উত্তম কুমারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যিশু সেনগুপ্ত। ‘যেতে নাহি দিব’ ডকু ফিচারে অভিনয় করেছিলেন সুজন মুখোপাধ্যায়। অতনু বসুর ‘অচেনা উত্তম’ সিনেমাতে মহানায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘অতি উত্তম’ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়।  

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমার শুটিং চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হন উত্তম। মাত্র ৫৪ বছরের ক্ষণজন্মা কিংবদন্তি এ মহানায়ক মাত্র ৩২ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে আমাদের যা দিয়ে গেছেন তা অতুলনীয়। সৃষ্টিশীল মানুষ চলে গেলেও ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকেন। উত্তম কুমার যে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন, তা বাঙালির অন্তর জুড়ে অমলিন থাকবে যুগ থেকে যুগান্তর।

/এসএইচ

         মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ   


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply