বাংলাদেশের সাথে ২০০ পেরোতে না পারা উইন্ডিজ কীভাবে ৩০০ হাঁকাচ্ছে ভারতের সাথে!

|

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনটি ওয়ানডেতে একবারও পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০’র কোটা পেরোতে না পারা ক্যারিবিয়ানদের ৩ ম্যাচের স্কোর যথাক্রমে ১৪৯, ১০৮ ও ১৭৮। তিনটি ম্যাচই বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তামিম ইকবালরা। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানেই যেন বদলে গেল সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ! দুই ম্যাচে হারলেও প্রতিবারই ক্যারিবিয়ানরা অতিক্রম করেছে ৩০০ রানের মাইলফলক। ম্যাচ জিততে ঘাম ছুটে গিয়েছে ভারতের। কীভাবে এতটা বদলে গেল উইন্ডিজ, তা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সেখানে দেখানো হয়েছে, ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালো খেলার কারণ।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একই দল খেলেছে। কিন্তু আলাদা বিপক্ষ দুই দলের স্কোয়াড। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া প্রথম একাদশের প্রায় সবাইকে নিয়ে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ভারত গিয়েছে অনেকটাই দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে। উইন্ডিজ সফরে নেই রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলি, কে এল রাহুল, রিশাভ পান্ত, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরার মতো নিয়মিত খেলোয়াড়রা। বোলিং ইউনিটেও যুজভেন্দ্র চাহাল ছাড়া বাকিদের অভিজ্ঞতা নেই খুব বেশি।

কেবল স্কোয়াডই নয়, বদল হয়েছে মাঠেও। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে হয়েছিল তিনটি ম্যাচ। সেখানে উইকেটের দু’দিকে বাউন্ডারির দূরত্ব ৮০ ও ৭৮ মিটার। অন্য দিকে ভারতের বিরুদ্ধে ত্রিনিদাদের কুইনস পার্ক ওভালে খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই মাঠ অপেক্ষাকৃত ছোট। উইকেট থেকে দু’দিকের বাউন্ডারির দূরত্ব ৬২ ও ৭০ মিটার। বড় মাঠে চার-ছয় মারা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন। ভারতের বিরুদ্ধে মাঠ ছোট হওয়ায় সেই সমস্যা হয়নি নিকোলাস পুরানদের।

পার্থক্য রয়েছে উইকেটেও। প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের পিচ স্পিন সহায়ক। বাংলাদেশের স্পিনাররা তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের মোট ২১টি উইকেট নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে নিজেদের পছন্দের উইকেটের ফায়দা তুলেছেন তারা। অন্যদিকে, কুইনস পার্কে স্পিনারদের জন্য সামান্য সুবিধা থাকলেও নেই সুইং। ফ্ল্যাট উইকেটে বল করতে সমস্যায় পড়েছেন ভারতীয় পেসাররা।

প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে মোট ২৫টি এক দিনের ম্যাচ হয়েছে। বাংলাদেশ সিরিজের আগে এই মাঠে শেষ ২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই মাঠে এক ইনিংসে সর্বাধিক রান ৩০৯। সর্বনিম্ন রান ৯৮। প্রথম ইনিংসের গড় রান ২১৬। অন্যদিকে, কুইনস পার্কে হয়েছে ৭০টি এক দিনের ম্যাচ। এক ইনিংসে সর্বাধিক রান ৪১৩। সর্বনিম্ন ৭৫। প্রথম ইনিংসের গড় রান ২৬৫। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, গায়ানার তুলনায় ত্রিনিদাদের মাঠে রান করা অপেক্ষাকৃত সহজ। সেটা দেখা গিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলায়।

কন্ডিশন, পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন, মাঠে ক্রিকেটাররা যে রকম খেলবেন তেমনটাই ফল করবে তাদের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের পর বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম বলেছিলেন, ওয়ানডেতে বদলে যাবে এই চিত্র। সেটা দেখাও গিয়েছে। জয়ের লক্ষ্য নিয়েই ঝাঁপিয়েছেন তামিমরা। স্পিনাররা দুর্দান্ত বল করেছেন। নিরাশ করেননি ব্যাটাররা। ফলে সহজেই সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।

তবে দুই সিরিজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ অনেক ক্ষেত্রেই তুলে আনতে পারে না নৈর্ব্যক্তিক নিয়ামকগুলোকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্যারিবিয়ানরা ভালো করতে পারেনি বলেই ভারতের বিরুদ্ধেও খারাপ খেলবে, এমন ধারণা যৌক্তিক নয়। ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক নিকোলাস পুরান জানিয়েছিলেন, এটি তাদের কাছে নিছক সিরিজ নয়, বাঁচার লড়াই। বাংলাদেশের কাছে যে অসম্মান হয়েছে, সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার লড়াই। সেই লড়াই দেখা গিয়েছে তাদের খেলা ও শরীরী ভাষায়। দুটো ম্যাচেই ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে শেষ ওভারে গিয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাল খেলতে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ হলেও ভারতীয় বোলারদের আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের লেংথ বলে পারদর্শিতার পরিচয় পেলেও শার্দুল ঠাকুর, মোহম্মদ সিরাজরা টানা করে গেছেন লেংথ বল। আর রক্ষণাত্মক বোলিংয়ের খেসারত দিয়েছেন স্পিনাররা।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিপক্ষে বিবর্ণ উইন্ডিজ কীভাবে লড়ছে ভারতের সাথে, জানালেন চাহাল

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply