মিয়ানমারের জান্তার ওপর চাপ বাড়াতে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

|

সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র মুখপাত্র নেড প্রাইস।

আকস্মিকভাবে মিয়ানমারে চার গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের প্রতি তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জান্তা সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে চীনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর বিবিসির।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, আমরা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যেহেতু অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীনের ওপর মিয়ানমারের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি; তাই দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তাকে চাপে রাখতে চীনের সক্রিয় ভূমিকা একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি আমরা।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার বিরোধী সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তার অভিযোগে গত বছর গ্রেফতার হন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী কর্মী কিয়াও মিন ইউ ওরফে কো জিমি ও সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ও দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির মিত্র ফিও জেয়া থাও। এছাড়া জান্তাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের গোপন তথ্য দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় হ্লা মিও অং এবং অং থুরা জাও নামের দুই গণতন্ত্রকর্মীকে।

এর আগে, ২০২১ সালে ইয়াঙ্গুনে তাদের গ্রেফতারের পর জান্তা নিয়ন্ত্রিত আদালতে কয়েক মাসের রুদ্ধদ্বার বিচার শেষে গত জানুয়ারিতে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন কো জিমি ও ফিও জেয়া থাও, কিন্তু তাদের আপিল খারিজ করে দেয় জান্তা আদালত।

সোমবার (২৫ জুলাই) আকস্মিকভাবেই চার গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন এ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেন, এ পর্যন্ত মিয়ানমারে যতো মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, সেসবের সাথে তুলনা করলে এ অপরাধীদের কয়েকবার ফাঁসি হওয়া উচিত।

জান্তা মুখপাত্রের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, জান্তার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা যায় না। আমরা বিশ্বের সব দেশকে অনুরোধ জানাবো যেনো মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তাকে কোনো প্রকার ঋণ দেয়া না হয় এবং তাদের কাছে কোনো অস্ত্র বিক্রি না করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের পর এটিই মিয়ানমারে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দৃষ্টান্ত। জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আশঙ্কা, এ ঘটনার পর অন্যান্য অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্তদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়লো।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রু বলেছেন, সামরিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আরও ১৪০ জন রয়েছেন মৃত্যুঝুঁকির তালিকায়। গেলো তিন দশকের মধ্যে প্রথম বিচারিক শাস্তি কার্যকরের মাধ্যমে, খুললো নিপীড়নের নতুন দরজা। নিয়মিত এখন ফাঁসিকাষ্ঠে অপরাধীদের ঝোলাবে জান্তা। এছাড়া, মিয়ানমারের কারাগারগুলোর পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সেখানে, নির্যাতন সইতে না পেরেই অনেকেই মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিশেষ উপদেষ্টা শিয়ারা সানগিওর্জিও বলেছেন, রাষ্ট্রীয় শোষণের চূড়ান্ত উদাহরণ তৈরি করলো মিয়ানমার জান্তা। শুধু, ৪ গণতন্ত্রপন্থির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরেই থামবে না তারা। সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন শতাধিক মানুষ। স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে, তারাও রেহাই পাবে না। আন্তর্জাতিক মহলকে বলবো, বুলি আওড়ানো বাদ দিয়ে, কার্যকর পদক্ষেপ নিন। জান্তা সরকারকে জবাবদিহির মুখোমুখি করুন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply