গভীর রাতে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘরে আগুন দিয়ে বরগুনার বেতাগীর এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ শামীমকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে মারা যান তিনি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেছে, দরজার নিচ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে সেটি যেন বাইরে না বেরিয়ে আসে এজন্য বালি দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। তারা বলছে, এটা স্পষ্টতই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
৯ আগস্ট রাতে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষা মুড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ শামীম স্ত্রী সুচি আক্তার ও তিন বছর এবং দুই বছরের দুই শিশুকে নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে দুর্বৃত্তরা দরজা ও সামনের জানালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং এর আগে ঘর থেকে বের হওয়ার মূল দরজা বন্ধ করে দেয়।
ঘটনার সময় শামীমের বড় বোন নাসিমা আক্তার ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলে তিনি দেখতে পান, মুখোশ পরা এক ব্যক্তি জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে পেট্রোল ছড়িয়ে দেশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। এ পর্যায়ে তিনি চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এসে শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভাঙে। ভোররাতে আহত অবস্থায় বরিশাল মেডিকেলে নেয়া হলে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
চার বোনের একমাত্র ভাই শামীম। শামীমের বোনরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুকে যেমন সপরিবারে খুন করা হয়েছে, সেভাবেই দুটি শিশুবাচ্চা ও স্ত্রীসহ আমার ভাইকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন শামীমের মা মনোয়ারা বেগম। চিন্তিত শামীমের দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়েও। আগুনের ধোঁয়ায় শামীমের স্ত্রী সুচি আক্তারের কণ্ঠনালীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারছেন না। তবে তার স্বামীর কোনো শত্রু আছে কিনা তা কখনোই তার কাছে বলতেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই ইউনিয়নের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন জমাদ্দার ইউনিয়ন ও সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শরীফ দুজনেই বলছেন, শামীমের সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
বেতাগী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান বলছেন, ভালো মানুষ ছিলেন শামীম। তিনি মানুষকে যেমন সহযোগিতা করতেন, পুলিশকেও সহযোগিতা করতেন। আমরা ইতোমধ্যে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছি। ভিকটিমের স্ত্রীর সাথেও তারা কথা বলেছেন।
/এডব্লিউ
Leave a reply