বরগুনায় ইউপি সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা, স্তব্ধ এলাকাবাসী

|

নিহত ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ শামীম।

গভীর রাতে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘরে আগুন দিয়ে বরগুনার বেতাগীর এক ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যানকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত ওই ইউপি সদস্যের নাম ফারুক আহমেদ শামীম। এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে অপরাধীদের ধরতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।

বুধবার (১০ আগস্ট) রাত আড়াইটা। মায়ারহাট গ্রামের নিজ বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ। হঠাৎই ঘুম ভেঙে দেখতে পান আগুন। বের হতে গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে আটকানো দরজা। দগ্ধ হয় শামীমের শরীরের ৭০ শতাংশ।

জানা গেছে, ঘরের সামনের জানালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় অন্ধকারে কাউকে ঘরের সামনে দেখে প্রথমে নিজের ভাই ভেবে ভুল করেন নিহতের বোন নাসিমা। তিনি বলেন, ম্যাচ জ্বালিয়ে ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে মারতে দেখে আমি চিৎকার করতে শুরু করি। সবাই আমার বলে আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু নাই। আজকে দেখেন ওর জন্য সবাই কাঁদছে, গাছের পাতাও কাঁদছে ওর জন্য।

ভোররাতেই আহত অবস্থায় বরিশাল মেডিকেলে নেয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শামীম। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউপি সদস্য শামীমের স্ত্রী সূচি আক্তারের শ্বাসনালী। তবে অনেকটাই অক্ষত তাদের ২ ও ৩ বছর বয়সী দুই সন্তান।

ভোররাতেই আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজে নেন স্বজনরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শামীম।

উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলের হত্যার বিচার দাবি মা মনোয়ারা বেগমের। তিনি বলেন, আমার নাতি দুইটা এখন কার কাছে যাবে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

ওই ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানও শামীম হত্যার বিচার চাইছেন। তারাও খুঁজে পাচ্ছেন না এমন নির্মম হত্যার কারণ।

সরিষা মুড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শরীফ বলেন, ওর ব্যবহার আর ভাষা শুধু আমাকেই না সমস্ত এলাকাবাসীকে মুগ্ধ করতো। আমরা শামীমের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

সরিষা মুড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন জমাদ্দার বলেন, শামীম আমার আস্থাভাজন ছিল। ওকে প্যানেল চেয়ারম্যানও বানিয়েছিলাম আমি। খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাই।

ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বেতাগী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান বলেন, এটাকে নৃশংস ও পরিকল্পিত খুন বলেই মনে হয়েছে আমাদের। সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার।

সড়িষামুড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের ইউপি সদস্য ছিলেন শামীম। পরিবারে চার বোন আর একমাত্র ভাই তিনি। শামীমের মৃত্যুতে স্তব্ধ ও আতঙ্কিত গোটা এলাকা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply