বিশ্বজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত লেখক সালমান রুশদি। ১৯৮৮ সালে তার ৪র্থ বই স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর নিন্দার ঝড় ওঠে মুসলিম বিশ্বে। এর পর থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে কট্টরপন্থীরা। এমনকি, তাকে হত্যার জন্য ফতোয়া ও ৩০ লাখ ডলার পুরস্কারও ঘোষণা হয়েছিল ইরানে। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়েই পার করেছেন তিন দশকের বেশি সময়।
১৯৮১ সালে ২য় উপন্যাস মিডনাইট’স চিলড্রেন বইয়ের জন্য পেয়েছিলেন বুকার পুরস্কার। তবে ভারতীয় বংশোদ্ভুত সালমান রুশদিকে নিয়ে তোলপাড় শুরু ১৯৮৮ সালে, ৪র্থ উপন্যাস স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর।
বইটিতে মহানবি হযরত মুহাম্মদকে (স) অবমাননার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ক্ষোভে-ফুঁসে ওঠে মুসলিম বিশ্ব। ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই ঔপন্যাসিককে হত্যার জন্য ফতোয়া জারি করেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। সালমানের মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। বইটি প্রকাশের সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আনা হয় ব্লাসফেমির অভিযোগ। এ ঘটনার জেরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয় যুক্তরাজ্য-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্কে।
বইটি ঘিরে রুশদির বিরুদ্ধে একাধিকবার সহিংস বিক্ষোভ ছড়ায় বিভিন্ন দেশে। মুম্বাইয়ে ১২ জনসহ দাঙ্গায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৫৯ জনের।
১৯৯১ সালে খুন হন বইটির জাপানি ভাষায় অনুবাদক হিতোশি ইগারশি। ওই বছরই ছুরিকাহত হয়ে বেঁচে যান বইটি ইতালিয়ান অনুবাদক। ১৯৯৩ সালে গুলিবিদ্ধ হন নরওয়ের প্রকাশক। ইরান সরকার অনেক বছর ধরেই সালামানের দিকে গুরুত্ব না দিলেও তুলে নেয়নি মৃত্যু পরোয়ানা।
বই নিয়ে বিতর্কের পর প্রায় এক দশক গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন সালমান। ১৯৯৮ সালের পর মোটামুটি প্রকাশ্যে দেখা গেলেও চলাফেরা করেছেন ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনীর সুরক্ষা নিয়ে। যখনই সুযোগ পেয়েছেন সাফাই গেয়েছেন নিজের লেখার পক্ষে
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে সালমান রুশদি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলে এমন কথার মূল্যায়ণও করতে হবে যা আপনার পছন্দ নয়। বাক স্বাধীনতা যদি কেবল আপনাদের নিজেদের আদর্শ তুলে ধরার চর্চা হয়, সেটাকে সেন্সরশিপ বলে।
১৯৪৭ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে এক মুসলিম কাশ্মিরি পরিবারে জন্ম হয় সালমানের, তবে পরে তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। ১৪ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে চলে যায় তার পরিবার। আর গেলো ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন সালমান। ২০১৬ সালে পান মার্কিন নাগরিকত্ব।
/এডব্লিউ
Leave a reply