ষ্টাফ রিপোর্টার
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে। সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বুধবার মামলাটি দায়ের করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোছা. রুখসানা পারভীন।
মামলায় স্বামী বেলায়েত ছাড়াও তার বাবা মোহাম্মদ মইনুদ্দিন, মা মোছা. রোকেয়া বেগম এবং তার বোন দিলারা সুলতানাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। আসামি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার ঘিয়র থানার তরা গ্রামের বাসিন্দা। সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজির ফজলে খোদা ৫৫২/১৮ নং পিটিশন বুধবার বিকালে আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বেলকুচি পৌর মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী মো. মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ ও আব্দুর রাজ্জাক আতা এবং সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল হামিদ লাভলু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৫ জুন বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে বেলায়েত তার স্ত্রী রুখসানাকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন। যৌতুক না পেয়ে তাদের ছয় বছরের শিশু সন্তানকেও অবহেলা করতেন। গত ৯ মার্চ ঢাকায় পুলিশ অফিসার্স মেসে দেখা করতে গেলে যৌতুকের দাবিতে সন্তানের সামনেই বেলায়েত তার স্ত্রীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে রুখসানা পারভীনের মা-বাবা ঢাকা গিয়ে তাকে গ্রামের বাড়ি বেলকুচিতে নিয়ে আসেন।
মামলায় আরও বলা হয়, এরপর বেলায়েত, তার মা-বাবা ও বোন মিলে গত ৩০ মার্চ বেলকুচিতে আসেন। এসময় বাদীর বাবা-মা ধারদেনা করে বেলায়েত ও পরিবারের দাবি করা যৌতুকের ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। ওই সময় স্ত্রী রুখসানা তাদের সঙ্গে যেতে রাজি না হওয়ায় বেলায়েত তাকে বেধড়ক মারধর করার পর একপর্যায়ে তলপেটে লাথি মারেন। এতে গর্ভে থাকা ২ মাসের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে রুখসানা ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন। চিকিৎসা শেষে গত ৪ জুন বেলকুচি থানায় এজাহার দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ন্যায় বিচার পেতে রুখসানা আদালতে যান।
মামলার এজাহার জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বুধবার সন্ধ্যায় রুখসানা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার স্বামীর সঙ্গে নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ঢাকার বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে। চুয়াডাঙ্গায় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকাকালীন তার সঙ্গে এক নারী এসআই’র সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জেনে ফেলায় তার স্বামী তার ওপর নির্যাতন শুরু করে।
মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বেলকুচি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাদী আমার থানায় এসেছিলেন পরিচিত হতে, কিন্তু মামলা বা এজাহারের বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছুই বলেননি।’
এদিকে মুঠো ফোনে স্ত্রী রুখসানাকে মারধর ও নির্যাতন করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী একজন মানসিক রোগী। চাকরিতে অনৈতিক উপার্জন করায় তার আয় আমরা কখনও গ্রহণ করিনি। এছাড়া এগুলো একেবারেই পারিবারিক বিষয়। তাই এ বিষয়ে কথা না বলাই ভালো।’
Leave a reply