ঘরে খাবার নেই; ভয়াবহ কষ্টে কাটছে দিন। সব প্রতিবন্ধকতা এড়িয়েই মজুরি বাড়ানোর দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছে চা শ্রমিকরা। মজুরির বাইরে অন্যান্য সুযোগসুবিধা কাগজে থাকলেও অধিকাংশই বাস্তবে নেই বলে দাবি তাদের। সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান এই দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকরা।
হবিগঞ্জের চাঁন্দপুর চা বাগানের শ্রমিক আলোমনি রাজবংশী। অসুস্থ স্বামী আর দুই সন্তানের সংসার চলে তার আয় দিয়েই। প্রতিদিনের ১২০ টাকা দিয়েই সারতে হয় সংসারের খরচ। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলছে কর্মবিরতি। তাই রোজগারও এখন বন্ধ। চেয়েচিন্তে কোনো রকমে চলছে তাদের দিন। আলোমনি রাজবংশী বলেন, এক কেজি চাল কিনলে এক পোয়া আধ পোয়া করে রান্না করে চলতে হয়। এভাবে খাওয়ার অনেক কষ্ট।
হাতে টাকা নেই। বাকিতেও দোকান থেকে মিলছে না পণ্য। প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনারও সাধ্য নেই আলোমনির স্বামী অনিল রাজবংশীর। তিনি বলেন, বর্তমানে দোকান থেকে বাকিতে জিনিস দিচ্ছে না। আর টাকা না দিলে আনাজপাতি কীভাবে দেবে? কোনোরকমে জীবন রক্ষা করে চলছি।
দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে ৩০০ টাকার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে শুরু হয় ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি। এরপর পূর্ণদিবসে যায় চা শ্রমিকরা। শ্রম অধিদফতর ও মালিকপক্ষের সাথে দু’দফা বৈঠকেও কোনো সমাধান মেলেনি। আন্দোলরত শ্রমিকরা জানালেন, তারা না খেয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের আন্দোলনে কেউ যোগ দিচ্ছে না। তাদের সুযোগসুবিধা কেউ দিচ্ছে না। এখন আর কেউ ভাতের মাড় ফেলছে না। ভাত ও মাড় খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। এক শ্রমিক জানালেন, এখন তিনি মরতে চান। রাজপথ থেকে দাবি আদায় না করে ফিরবেন না। প্রয়োজন হলে জীবন দানেও রাজি তিনি।
এদিকে, মালিকপক্ষের দাবি হচ্ছে, একজন শ্রমিককে মজুরির পাশাপাশি যেসব নগদ ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা দেয়া হয়, তাতে শ্রমিকদের মাথাপিছু দৈনিক আয় দাঁড়ায় ৪০২ টাকা। তবে চা শ্রমিকরা বলছেন, সুযোগসুবিধার বেশিরভাগই কাগজে থাকলেও বেশিরভাগই বাস্তবে নেই। দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
বাংলাদেশ চা-কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, মালিকপক্ষ বলছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। মেডিকেলের বিষয়টা হয়তো আপনারা জানেন না। মেডিকেলে যখন যাই, তখন আমাদের প্যারাসিটামল ছাড়া কিছুই দেয় না। ট্রাক্টরে করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কোনো চা বাগানেই অ্যাম্বুলেন্স নাই। কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নাই। আড়াই কেজি রেশন দেয়া হয়; এর চেয়ে বেশি কিছু না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি হস্তক্ষেপ করেন তবে অবশ্যই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা একটা সমাধান পেতে পারি।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ বলছে, গত ১০ বছরে দেশে চায়ের দাম ১৯৭ থেকে এক টাকাও বাড়েনি। পক্ষান্তরে শ্রমিক মজুরি বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। তারা ১৪ টাকা মজুরি বৃদ্ধি প্রস্তাব করে বলেন, গত মেয়াদের তুলনায় তা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, দ্রুত সংকট সমাধানের মাধ্যমে বাগানগুলোতে পুরো উদ্যমে শুরু হবে উৎপাদন।
/এম ই
Leave a reply