ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকতে হলে মানতে হবে কিছু নিয়ম; যার মধ্যে আছে হ্যান্ডশেক করার রীতি, সালাম দেয়ার ধরণ, রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের মান্য করার নির্দেশনা! হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘জিয়া হলে থাকতে হলে’ শিরোনামে নবীন শিক্ষার্থীদের আচরণ সংক্রান্ত ১৪টি ‘আদেশ’ জারি করেছেন হল ছাত্রলীগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আদেশগুলোকে নোটিশ বোর্ডেও টানানো হয়েছিল। যা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হলে হল শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) শাখা ছাত্রলীগের নাম ব্যাবহার করে জারিকৃত আদেশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইদের’ লিখিত ‘জিয়া হলে থাকতে হলে…’ শিরোনামে নিয়মের একটি তালিকা হলের নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়। এতে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্য পালনীয় ১৪টি নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। ওই আদেশনামায় উল্লেখিত আদেশগুলো নিম্নরূপ:
১. হলের ভেতর এবং বাহিরে বড় ভাইদের সালাম দিতে হবে। সালাম দেয়ার সময় ডান হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে হবে, বাম হাত পেছনে রাখতে হবে। এ সময় বড় ভাইদের হাতে ঝাঁকি বা চাপ দেয়া যাবে না। হাত বুকে রাখা যাবে না।
২. মসজিদ, টিভিরুম, রিডিংরুম, বাথরুম, ক্যানটিন, মেস, ওয়াফাইজোন এবং সেলুন দোকানে সালাম দেয়া যাবে না।
৩. একসঙ্গে অনেক বড় ভাই থাকলে চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী সালাম দিতে হবে।
৪. প্রত্যেক বড় ভাই এবং ইয়ারমেটের নাম্বার রাখতে হবে।
৫. ছাত্রলীগের সকল প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হবে। সমস্যা থাকলে ইমিডিয়েট বড় ভাইদের বলতে হবে।
৬. গেস্টরুমে লুঙ্গি, ট্রাউজার, টিশার্ট ও মোবাইল প্যান্ট পরে আসা যাবে না। এমনকি রাত ১২টার পর এগুলো পরে রুমের বাহিরে আসা যাবে না। ৱ
৭. ক্যান্টিনে প্রথম ৪টি সারিতে বসা যাবে না এবং ক্যান্টিন বয়দের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।
৮. টিভিরুমের প্রথম সারির চেয়ারগুলোতে বসা যাবে না এবং রিমোট হাতে নেয়া যাবে না।
৯. চেইন অব কমান্ড মানতে হবে। বড় ভাইদের অনুমতি ব্যতীত কোনো রুমে যাওয়া যাবে না।
১০. বড় রিডিংরুম ব্যবহার করতে হবে, কোনোভাবেই ছোট রিডিংরুমে প্রবেশ করা যাবে না।
১১. হলে ধূমপান করা যাবে না। তবে রুমে পরিবেশ থাকলে ধূমপান করা যাবে।
১২. হলে থেকে ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠন করা যাবে না। যেমন: ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাম সংগঠন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
১৩. ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১৪. হলের যেকোনো ব্যাপারে ইমিডিয়েট বড় ভাইদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে হলের কোথাও লিখিতভাবে এসব নিয়ম টানানো না থাকলেও তাদের আবশ্যিকভাবে এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়। না মানলে ‘বড় ভাইদের’ কাছ থেকে শাস্তি পেতে হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিটি হলেই ‘গেস্টরুম’ আছে, যেগুলো মূলত অতিথিদের বসার জন্য। তবে ছাত্রলীগ সেগুলোকে ম্যানার শেখানোর জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে। প্রায় রাতেই প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের সেখানে ডেকে নেন ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইয়েরা’। তারপর তাদের শেখানো হয় ‘ম্যানার’। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নিলে জবাবদিহি চাওয়া হয়। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চলে নির্যাতন।
পরে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলে থাকি বাধ্য হয়ে। ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য নেই তাই হলে উঠেছি। এখানে এসে দেখি ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরাই সব। তাদের বাইরে কোনো নিয়ম এখানে খাটে না। প্রশাসনকেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখি না।
তবে এ তালিকাকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট’ উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন বলেন, একটি মহল ছাত্রলীগকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি এরকম কোনো নির্দেশনার ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় নই, আমি এরকম কিছু দেখিনি সুতরাং এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য আমি করবো না। হলে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই থাকতে হয়।
/এসএইচ
Leave a reply