ক্যারাম নাটকের স্ক্রিপ্ট কার লেখা? ফারুকী ও কচি খন্দকারের পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস

|

ক্যারম নাটকের স্ক্রিপ্ট কে লেখেছেন, এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও কচি খন্দকার। ক্যারাম নাটকের অভিনেতা মোশাররফ করিমের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এর শুরু।

প্রথমে স্ট্যাটাস দেন কচি খন্দকার। মোশাররফ করিমের সঙ্গে ছবি দিয়ে ফেসবুকে তিনি লেখেন, আমার ক্যারাম স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু। তারপর একের পর এক চ্যালেঞ্জিং ক্যারেক্টার প্রতিভাগুণে উজ্জ্বল করেছে। সেই প্রতিভাবান অভিনেতা মোশাররফ করিমের জন্মদিনে ভালোবাসা। আগামীতে আমার প্রথম সিনেমাতেও মোশাররফ থাকছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, সে আমার কতটা প্রিয় অভিনেতা। জয় হোক জন্মদিনের।

মোশারফ করিমের জন্মদিনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মোস্তাফা সরয়ার ফারুকী। তাতেও উঠে আসে ক্যারামের স্ক্রিপ্টের প্রসঙ্গ। এ নির্মাতা ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, আমি বাংলাদেশে যাদের সাথে কাজ করেছি তাদের মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অপি করিম, তাসনিয়া ফারিন, শাহীর হুদা রুমি— এই কয়জন অভিনয় শিল্পীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাগুলা নিয়া মাঝে মধ্যে লিখতে ইচ্ছা করে। পরে আর লিখা হয় না।

ফারুকী আরও লেখেন, আজকে মোশাররফ করিমের জন্মদিন উপলক্ষ্যে মনে হইলো এক কিস্তি লেখা যায়। এভাবে এক এক করে চঞ্চল ভাই, তিশাসহ সবার জন্মদিনে একটা করে লেখার চেষ্টা করতে চাই।

মোশাররফ করিমের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ক্যারাম! ক্যারাম কাজটা মূলত দুইটা জিনিসের অনুপ্রেরণায় বানানো। প্রথমটা হলো ছোটবেলায় ক্যারামে আমার নিদারুণ ব্যর্থতা। মাসুদ, বাবলু, এমনকি জাহাঙ্গীরের কাছেও হারতাম। কিন্তু পরাজয়টা কখনোই মানতাম না। দ্বিতীয় অনুপ্রেরণা হচ্ছে আমাদের শুটিংয়ের বাড়ির ক্যারাম টুর্নামেন্ট। আমি আর আমরা সব ভাই-ব্রাদার এক সাথে থাকতাম সেখানে; এটা সবাই জানেন। সেই আবাসিক ক্যাম্পে আমরা আবিষ্কার করি কচি খন্দকার মোটামুটি আমার ছোটবেলার বুড়ো ভার্সন। তখন আমরা প্রতি খেলায় হারার পর কচিকে অত্যাচার করার নানা সৃজনশীল উপায় আবিষ্কার করি। এবং কচি ক্ষেপে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমি ঠিক করলাম এই সব নিয়েই ক্যারাম নামে একটা টেলিফিল্ম বানাবো। এবং কচি খন্দকারের প্রতি অত্যাচারের প্রতিদান হিসাবে তাকে স্ক্রিপ্ট রাইটার ক্রেডিট দেই। যদিও স্ক্রিপ্ট লেখা সেশনের সাথে তার আদতে কোনো সংস্পর্শ ছিল না।

তখন আমি স্ক্রিপ্ট লেখি সোফায় শুয়ে শুয়ে। লেখি না আসলে, দৃশ্য বলি! মাহমুদ আর সুজন সেটা কাগজে কপি করে। স্ক্রিপ্টের মাঝ পর্যায়ে মোশাররফ করিম আসেন আমাদের ক্যাম্পে। তাকে কাস্ট করার পর আমার ওপর চাপ বেড়ে যায়। একজন সাংবাদিক ফোন করে বললেন, বস, আপনি শিওর উনি পারবেন? উনি কিন্তু প্রমিনেন্ট কেউ না। আমি বললাম, হি উইল বি প্রমিনেন্ট প্রেটি সুন। সেই সাংবাদিক আমার ফ্রেন্ডলিস্টেও আছেন।

তারপর শুটিংয়ে যাই কুমিল্লায়। প্রথম দিন উনি খুবই চাপে ছিলেন। কারণ নতুন ইউনিট, নতুন কার্যপদ্ধতি। আমি তখন কৌশলে কম চাপওয়ালা দৃশ্যগুলা করতে থাকি। আর উনাকে আমার সিস্টেমের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢোকাতে থাকি! এটা একটা প্রক্রিয়া যেটা শুধু রিহার্সেল করে সম্ভব না। এটা হচ্ছে একটা হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ। যেখানে আমরা আলোচনা করি কবিতা নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, দেশ নিয়ে। এইসব করতে করতে কখন যে আলগোছে আমরা একজন আরেকজনের মাথার ভেতরে ঢুকে বসে যাই। এই ঢোকাটা হয়ে গেলে বাকিটা তো ইশারায় হয়ে যায়।

ক্যারাম আর ৪২০-এর পর ওই সাংবাদিক ভাই আমাকে এক অনুষ্ঠানে বলে, না বস, মোশারফ ইজ আ জিনিয়াস।
আজকে সবাই জানে হি ইজ আ জিনিয়াস। দীর্ঘায়ু হন মোশাররফ ভাই। আর ভালো ভালো কাজ করেন। ইউ হ্যাভ আ লট টু অফার।

ফারুকীর এ স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে ফেসবুকে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়েছেন কচি খন্দকার। লেখেন, মিথ্যা ক্রেডিট নিয়ে মরতে চাই না- প্রসঙ্গ ক্যারাম। আজ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাস পড়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম। আমার সাথে ক্যারাম খেলতে যেয়ে জয়-পরাজয় নিয়ে আমাকে অনেক অত্যাচার করার জন্য পুরস্কারস্বরূপ ক্যারাম টেলিফিল্মে রচনাকারী হিসাবে আমাকে ক্রেডিট দিয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এই ক্যারাম লেখায় আমার নাকি কোনো ভূমিকাই নাই।

কিন্তু ঘটনা হাজার বছর আগের না, এই মাত্র সেদিনের কথা। ভাই-ব্রাদার সবাই জীবিত, প্রায় সবাই জানে। তাদের সামনেই আমি আমার ক্যারামের স্ক্রিপ্ট পড়ি। এটাই সত্য ইতিহাস, এর মধ্যে কোনো মিথ্যাচার নাই। ঘটনা অনেক কিছু উল্লেখ করা যায়। কিন্তু আমি ইতিহাসের দীর্ঘসূত্রতা টানলাম না এই ভেবে সত্য সুন্দর। আর সত্য প্রকাশের দায় সমস্ত শিল্পীর। সতের জয় হোক। শিল্পীর জয় হোক।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ সরগরম এ ইস্যুতে। নানা মন্তব্য করা হচ্ছে। কচি খন্দকারকে সান্তনা দিয়ে অনেকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply