রাজধানীর উত্তরায় মাঝরাতে ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১১ আগস্ট দিবাগত রাতের ওই ঘটনাকে নিছক টাকা ছিনতাইয়ের জন্য খুনের কথা বলা হলেও, পাশের একটি সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। খুনের সময় বুথের পাশেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল কয়েক বন্ধু। মুমূর্ষু রক্তাক্ত শরিফকে উদ্ধার বা হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা না করে সটকে পড়েন তারা।
গত ১১ আগস্ট রাত পৌঁনে একটার দিকে উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ রোডের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুনের শিকার হন ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ। পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা খুনিকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। খুনের কথা স্বীকার করার পর জেলে পাঠানো হয় ধৃত ব্যক্তিকে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, কিছু বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। এছাড়া এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আর নতুন বা অন্য কোনো তথ্য আসেনি। ছিনতাইয়ের উদ্দেশেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে ধৃত ব্যক্তি।
পুলিশের আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য ও খুনির স্বীকারোক্তি দেখে ছিনতাইকারীর হাতে নিছক খুনের শিকার বলা হচ্ছে ঘটনাকে। কিন্তু ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিত হত্যার শিকার শরিফ উল্লাহ।
ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে গুরুত্বপুর্ণ চিত্র। সেখানে দেখা যায়, গত ১২ আগস্ট রাত ১২ টা ৪০ মিনিটে একটি সাদা প্রাইভেট কার এসে থামে এটিএম বুথের সামনে। ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ গাড়ি থেকে নেমে প্রবেশ করেন বুথে। কিছু সময় পরই সোজা হেটে এসে বুথে প্রবেশ করেন, মুখে মাস্কপড়া এক ব্যক্তি। বাইরে দাড়িয়ে থাকা বুথের নিরাপত্তাকর্মী ও প্রাইভেটকারের এক যুবক গাড়ি থেকে নেমে পায়চারিও করেন। হঠাৎ হামলার দৃশ্য দেখে পাশের সেক্টরের দায়িত্বরত রক্ষী সুমনকে ডেকে আনেন ডাচবাংলার নিরাপত্তা কর্মী শফিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, টাকা তোলার পরে দেখি রিকশায় করে একটা লোক আসলো। একটা মাত্র বুথে জায়গা বেশি হয় না এজন্য আমি একজনের বেশি ঢুকতেও দেই না। কিন্তু লোকটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো।
ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ যখন রাতে এই বুথে টাকা তুলতে ঢুকেছিলেন তখন পেছন থেকে কথিত ওই ছিনতাইকারী সেখানকার সিকিউরিটি গার্ডকে ধাক্কা মেরে বুথে প্রবেশ করে। আর সে দৃশ্য দেখেছিল শরিফ উল্লাহর সাথে আসা কয়েকজন বন্ধু, যারা সেখানে গাড়িতে অপেক্ষা করছিল।
এরপর, বুথ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে ধাওয়া করেন কয়েকজন। এর পরপরই এক যুবক গাড়ি থেকে নেমে বুথের গেটে কিছু সময় দাঁড়িয়ে মুমূর্ষু শরিফকে দেখেন। পরে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই প্রাইভেট কারের দরজা বন্ধ করে স্টার্টে থাকা গাড়িটি নিয়ে সরে পড়েন। ভূক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, সিসিটিভির এমন ভিডিও ফুটেজ দেখার পরও সেটা আমলে নিচ্ছে না পুলিশ।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ফ্রেন্ড সে আহত হয়েছে তাকে উঠায়ে নিয়ে মেডিকেলে নিয়ে যাই, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই বা বাসায় ফোন দেই। কিন্তু তাদের একদমই কোনো ভূমিকাই ছিল না।
নিহত শরিফ উল্লাহ’র স্ত্রী বলেন, অবস্থা এরকম না যে রাতে বুথ থেকে টাকা তুলে বাসায় আনতে হবে। বাসায় এক সপ্তাহ বা দশদিনের মতো টাকা আছে। এমন না যে টাকা তুলতেই হবে। সেখান থেকে দুই মিনিটের পথ গেলেই হাসপাতাল, ওর বন্ধুরা ওকে বাঁচাবে না বলেন? ওর বন্ধুরা ওকে না বাঁচায়ে চলে গেলো?
নিহতের আরেক স্বজন মামুন কবির বলেন, যেভাবে আঘাত করেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, মৃত্যু নিশ্চিত করতেই ওকে ওভাবে আঘাত করেছে। উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য না।
ঘটনার পরপর গাড়িতে থাকা বন্ধুরা কেনো শরিফ উল্লাহকে উদ্ধার বা হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা না করে চলে গেলো, সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় আসতে বলার পরই থেকে ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা ওই বন্ধুরা।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনার পর ভোরের দিকে আমরা নিহতের বন্ধুদের সাথে কথা বলেছিলাম। তারপর থেকেই তাদের ফোনগুলো বন্ধ।
তারও আগে পাশের একটি রেস্টুরেন্টেও ওই বন্ধুদের সাথে বেশ কিছু সময় ছিলেন নিহত শরিফ উল্লাহ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন ভূক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।
/এসএইচ
Leave a reply