আগরতলা ইমিগ্রেশনে নতুন নিয়ম, জানে না ভারতীয় হাইকমিশন, গ্যাঁড়াকলে যাত্রীরা

|

আখাউড়া প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্তপথে ভারত ভ্রমণে আগরতলা ইমিগ্রেশনের নতুন নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ছেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসায় ভারত ভ্রমণে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসায় ৩০ দিন ও বিজনেস ভিসায় ৭ দিনের মধ্যে ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

গত ২৮ আগস্ট থেকে আখাউড়া ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় আগরতলা ইমিগ্রেশনে এমন ভোগান্তির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি দর্শনার্থী ও বাণিজ্য ভিসাধারীরা। হঠাৎ করে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের এমন অঘোষিত সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বহু বাংলাদেশি ভারতীয় ভিসাধারী। এতে যেমন অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের। তবে মেডিকেল ভিসার যাত্রীদের যাতায়াতে কোনো বাধা নেই।

যদিও এর আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় মাসে একাধিকবার ও বিজনেস ভিসায় ইচ্ছেমতো ভারত যাতায়াতের সুযোগ ছিল। সূত্রে জানা গেছে, ভিসা কিংবা পাসপোর্টের মেয়াদ আছে, হয়ে গেছে আখাউড়া ইমিগ্রেশনও। কিন্তু ভারতের আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে।

যদিও এ বিষয়ে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কোনো তথ্য বিবরণী কিংবা নোটিশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন কোনো নিয়ম হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা ভারতীয় হাইকমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ফিরে আসা যাত্রীরা বলছেন, আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, টুরিস্ট ভিসায় ৩০ দিনে একবার ও বাণিজ্য ভিসায় ৭দিন পরপর ভ্রমণ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা।

ফেরত আসা যাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর গ্রামের বাসিন্দা অজিত জানান, তিনি ২৫ দিন আগে টুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। পূজোর কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বুধবার আবার যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় ইমিগ্রেশন জানিয়েছে, সর্বশেষ ভ্রমণের পর এক মাসের আগে তিনি আর যেতে পারবেন না।

এ সিদ্ধান্তের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করেই ফিরিয়ে দেওয়ায় ২৮ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন বাংলাদেশি হয়রানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অবশ্য এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এক মাসের মধ্যে ভারত গিয়েছেন এমন দর্শনার্থী ভিসার যাত্রীর চাপ কমে যায়।

এদিকে বাংলাদেশিদের জন্য এমন কড়াকড়ি করা হলেও ভারতীয় টুরিস্ট ও বিজনেস ভিসার পাসপোর্টধারীদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে আখাউড়া ইমিগ্রেশনে কোনো বাধা নেই।

বিজনেস ভিসার যাত্রী অনিল দে জানান, তিনি এক সপ্তাহ আগে ব্যবসার কাজে একবার ভারত গিয়েছিলেন। বুধবার (৩১ আগস্ট) আবার যেতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহ পর আসতে বলা হয়েছে।

গত ৩০ আগস্ট সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামের রায়হান উদ্দিন ভ্রমণ ভিসায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলা ইমিগ্রেশনে যান। কিন্তু আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান। কারণ, তিনি ১০ আগস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। ৩০ দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় ভ্রমণ হওয়ায় তাকে ফেরত পাঠানো হয়। ওই দিন সকালে তিনি আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছে বহির্গমনের নির্ধারিত ফরম পূরণ করেন। আখাউড়া ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তার পাসপোর্টে বহির্গমন সিল যুক্ত করে দেয়। আগরতলা ইমিগ্রেশন থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর পর এই বিষয়ে তিনি আখাউড়া ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও দেন।

একই অভিযোগ করেন ফেরৎ আসা ওই দুই যাত্রীও। যাত্রীদের অভিযোগ, আখাউড়া ইমিগ্রেশনের সকল কার্যক্রম শেষ করে আগরতলা ইমিগ্রেশনে গেলে একই অজুহাতে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রাজিব উদ্দিন ভূইয়া বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশনের নতুন নিয়মের ফলে ভ্রমণ ভিসায় যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়াবে পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কারণ, বন্দর দিয়ে মালামাল রফতানির সময় ব্যবসায়ীদের প্রায় প্রতিদিনই আগরতলা গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। এখন এই নিয়ম চালু থাকলে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হবে। কারণ, মালামাল রফতানির ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখা দিলে ব্যবসায়ীরা সাত দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আগরতলা যেতে পারবেন না। পণ্য রফতানি করে ব্যবসায়ীদের সাত দিন অপেক্ষা করতে হবে। এতে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, টুরিস্ট ভিসায় অনেক বাংলাদেশি ভারতে এসে চিকিৎসা করাচ্ছেন এবং বিজনেস ভিসায় অন্য কাজ করছেন, এমন সন্দেহ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই ২৮ আগস্ট সকাল থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কড়াকড়িতে অনেক বাংলাদেশি যাত্রীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

অবশ্য আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দেওয়ান মোর্শেদুল হক রিপন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভ্রমণ ও ব্যবসায়ী ভিসার বাংলাদেশি যাত্রীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। তারা যাত্রীদের বলছেন, পর্যটন ভিসায় মাসে একবার ও ব্যবসায়ী ভিসায় সাত দিনে একবার ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন। যা জানেন না বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন। তাদের মনগড়া মৌখিক নিয়মের হয়রানির শিকার হয়ে ফেরত আসা কয়েকজন যাত্রী আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply