পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সোহেল রানা নামে বিজিব সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য সিদ্দিকা নাহার (২৫) নামে এক গৃহবধূকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এর আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে গৃহবধূ মামলা দায়ের করলে বিচারকের হস্তক্ষেপে বিচ্ছেদ থেকে মুক্তি পান ওই দম্পতি। তবে বাড়ি ফিরেই বিচারকের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার গিতালগাছ গ্রামে। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ একই এলাকার বিজিবি সদস্য সোহেল রানার স্ত্রী। অভিযুক্ত সোহেল রানা একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। সে বর্তমানে কক্সবাজারের বান্দরবান রুমা বিজিবি ব্যাটালিয়ন-০৯ এ কর্মরত থাকলেও সে দুই মাসের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের প্রধানগছ গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে সিদ্দিকা নাহারের (২৫) বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের একই ইউনিয়নের গিতালগছ গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে বিজিবি সদস্য সোহেল রানার (২৭) সাথে পারিবারিকভাবে। বিয়ের সময় সোহেল রানাকে বিয়ের উপহার হিসেবে ৩ লাখ টাকা দেয় মেয়ের পরিবার।
এরপর বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। একই সময় নতুন করে ৪ লক্ষ টাকা যৌতুক চেয়ে শারীরিক ভাবে নির্যাতন শুরু করে সোহেল রানা ও তার পরিবার। এরপর ২০২১ সালে যৌতুকের দাবির অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী গৃহবধূ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। মামলা নং- নারী ও শিশু ২৫২/২০২১।
বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে কয়েক দফায় সমাধান করা হলে চলতি বছরের গত ২৩ আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল পঞ্চগড়ের বিচারক উভয় পরিবারের সাথে সমঝতা করে তাদের নতুন জীবন শুরুর সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গন থেকে বাড়ি ফিরেই মানসিক ও শারীরিকভাবে আবারও গৃহবধূর ওপর যৌতুকের জন্য পাশবিক নির্যাতন শুরু হয়। এতে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর যৌতুকের জন্য এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য আবারও নির্যাতন চালায় বিজিবি সদস্য সোহেল রানা।
অসুস্থ অবস্থায় শ্বশুর বাড়িতে পড়ে থাকার বিষয়টি বাবার বাড়ির লোকেরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করে। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী গৃহবধূকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ সিদ্দিকা নাহার অভিযোগ করে বলেন, মামলা তুলে নেয়ার পাশাপাশি আরও ৪ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে পাওয়ার জন্য সে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের পর থেকেই আমার সাথে এমনটা করছে সে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালতের বিচারক সমাধানও করে দিয়েছেন। কিন্তু সে তার পরিবারের লোকদের সহায়তায় বিচারকের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে আবারও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তার কথা না শোনায় বিজিবি সদস্য হওয়ায় হুমকি দিয়ে সব শেষ গত ২ সেপ্টেম্বর আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। আমি তার কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
ভুক্তভোগীর বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা বিষয়টি বার বার সমাধান করার চেষ্টা করেছি। আদালতে তিনবার এ বিষয়ে বিচারক শর্তসাপেক্ষে সমাধান দিয়েছে। কিন্তু সোহেল আমাদের কথাতো দূরে থাক আদালতের শর্তও মানছে না। আমার মেয়েকে হত্যার জন্য বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সোহেলের বিচার দাবি করছি। যাতে করে কোনো বাবার ভাগ্যে এমন অবস্থা না আসে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য সোহেল রানার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
ছেলে কতৃক যৌতুক ও নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বিজিবি সদস্য সোহেল রানার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের শারীরিক সমস্যা আছে। এ কারণে আমাদের সাথে তারা লেগে পড়েছে। তারা চাচ্ছে ছেলেটার চাকরি খাওয়ার জন্য।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, আদালতে তাদের সমঝতার হওয়ার পর আমাদের বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে আবারও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে ওই গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে। বর্তমানে গৃহবধূ চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবার শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) নতুন করে থানায় আরও একটি অভিযোগ করেছে। অভিযোগটি তদন্তে রয়েছে।
আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজার রহমান আজু বলেন, নতুন করে যদি অভিযোগ করে থাকে তাহলে তা না দেখে কোনো কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক বিএম তারিকুল কবির গত ২৩ আগস্ট মামলার তারিখের দিন বিকেলে দম্পত্তিসহ দুই পরিবারকে খাস কামরায় ডেকে নিয়ে বিচারকের হস্তক্ষেপে বিচ্ছেদ থেকে মুক্তি পান ওই দম্পতি। এ সময় বিচারক সোহেলকে দুই মাসের ছুটির মধ্যে ১ মাস বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করা ও ১ মাস স্ত্রীকে বাইরে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করার দু’টি শর্ত জুড়ে দেন। একই সাথে যে একমাস বাড়িতে অবস্থান করবে সেই মাসের প্রতি সপ্তাহে বিচারকের সাক্ষাতের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর থেকেই আবারও গৃহবধূ সিদ্দিকা নাহারকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে সোহেল রানার বিরুদ্ধে।
/এনএএস
Leave a reply