‘লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’; রানির মৃত্যুর পরে যা যা ঘটছে সবই পূর্বপরিকল্পিত

|

এলিজাবেথ অ্যালেক্সান্দ্রা ম্যারি উইন্ডসর একেএ কুইন এলিজাবেথ দ্য সেকেন্ড (১৯২৬-২০২২)

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদী শাসক হিসেবে রাজ সিংহাসনে ক্ষমতার ৭০ বছর পূর্তির পর বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) মৃত্যুবরণ করেছেন রানি ২য় এলিজাবেথ (৯৬)। ইতোমধ্যেই পরিবর্তিত হয়েছে ব্রিটেনের জাতীয় সঙ্গীত। এখন থেকে ‘গড সেভ দ্য কুইন’ এর স্থলে ব্রিটিশ নাগরিকরা গাইবেন ‘গড সেভ দ্য কিং’।

তবে এলিজাবেথের মৃত্যুর ভীষণ শোকের মুহূর্তে কী কী করা হবে তার প্রস্ততি নেয়া হয়েছে ১৯৬০ সালে। ছয় দশক আগে ঠিক করে রাখা রানির মৃত্যু পরবর্তী কর্মকাণ্ড শেষকৃত্য পর্যন্ত পালিত হবে অত্যন্ত কঠোরভাবে। আর এ পরিকল্পনাগুলোই পরিচিত ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ নামে।

অপারেশন লন্ডন ব্রিজের পরিকল্পনায় যেভাবে উল্লেখ করা আছে তা অনুযায়ী, রানি এলিজাবেথের মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে একটি ফোন কলের মাধ্যমে। সে অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রানির মৃত্যুর পর তার ব্যক্তিগত সেক্রেটারি স্যার এডওয়ার্ড ইয়াং নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে ফোন কলে জানান, ‘লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, গত বুধবারই রানির থেকে প্রধানমন্ত্রী হবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস; আর বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করলেন রানি।

‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ অনুযায়ী, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে রানির মৃত্যুর খবর জানানোর পর রানি যে ১৫টি দেশের সাংবিধানিক প্রধান ছিলেন সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এসব দেশের মধ্যে জ্যামাইকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, বাহামাস, পাপুয়া নিউগিনি উল্লেখযোগ্য। এরপরই, কমনয়েলথভূক্ত ৩৮টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে রানির মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এরপরই, কালো পিনে লাগিয়ে রানির মৃত্যু সংবাদ বাকিংহ্যাম প্যালেসের দরজায় লাগিয়ে দেন কুইন্স আর্মির একজন ফুটম্যান।

যুক্তরাজ্যে বিবিসিতে কর্মরত অনেকেই জানতেন না যে যেকোনো ন্যাশনাল ইমার্জেন্সির সময় যে সিগনালটি বাজানো হয় সেটি শুনতে কেমন। তবে বৃহস্পতিবার রানির মৃত্যুর পর সে সিগনাল শুনেছেন তারা। বিবিসির লোগো এবং ওয়েবসাইটে যে লাল রঙ সেটিকে কালো করে দেয়া হয়েছে রানির মৃত্যুর পর। এমনকি বিবিসির সংবাদ পাঠকরাও কালো স্যুট-টাই পরে সংবাদ উপস্থাপন করছেন। আগামী ১২ দিনের জন্য বিবিসি বাতিল করেছে তাদের সব কমেডি শো।

এদিকে, রানির মৃত্যুর পরপরই অনানুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজা হিসেবে স্বীকৃত হন প্রিন্স চার্লস। তিনি ৩য় চার্লস নামে সিংহাসনে আরোহন করতে যাচ্ছেন। রানির মৃত্যুতে দেশজুড়ে অর্ধনমিত রাখা হয় ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তার। শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় অর্ধনমিত করে রাখা পতাকাগুলোকে পুরোপুরি উত্তোলন করা হবে। ওই মুহূর্ত থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজা হবেন চার্লস; আর রানি হবেন তার স্ত্রী ডাচেজ অব কর্নওয়াল ক্যামিলা।

এরপর, একটি রাষ্ট্রীয় সফরে স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসের দায়িত্ব বুঝে নিতে যাবেন নতুন রাজা ৩য় চার্লস। তার এ সফর চলাকালীন সময়েই ওয়েস্ট মিনিস্টার হলকে প্রস্তত করা হবে রানির শেষকৃত্যের জন্য।

রানির শেষকৃত্যের ব্যাপারটি বেশ জটিল। রানির মৃত্যুর ৪ দিন পর বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে একটি শোক মিছিল যাবে। আর রানিকে সমাহিত করা হবে তার মৃত্যুর ৯ দিন পর। এ আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা হবে ২ হাজার। মূলত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সশরীরে রানির শেষকৃত্যে অংশ নেবেন। বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারিত হবে রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠান। অপারেশন লন্ডন ব্রিজ অনুযায়ী, রানি এলিজাবেথকে তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ও তার বাবা রাজা ৬ষ্ঠ জর্জের পাশে সমাহিত করা হবে। বালমোরাল ক্যাসলে মৃত্যুবরণ করায় রানির মরদেহ প্রথমে নেয়া হবে এডিনবরার হলিরুড হাউসে। সেখান থেকে ঐতিহাসিক দ্য রয়্যাল মাইলের পথ ধরে সেইন্ট জাইলস ক্যাথিড্রালে যাবে রানির মরদেহ।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply