জলবায়ু পরিবর্তনে খাদ্য নিরাপত্তা: ‘নতুন জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার’

|

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে খাদ্য নিরাপত্তা। বৃষ্টি কম হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ নিয়ে চিন্তিত সরকার। এতে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ। এর থেকে বের হতে কৃষকরা ঝুঁকছে জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে। পাল্টাচ্ছে চাষের ধরনও। নতুন জাত উদ্ভাবন ও জলবায়ু তহবিল সংগ্রহে গুরুত্ব না দিলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন কঠিন হবে বলে মনে করে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ইফাদ। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ জলবায়ু সহিষ্ণু কিছু ফসল উদ্ভাবন হয়েছে।

আমন ধানের চাষ অনেকটাই বৃষ্টি নির্ভর। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের মাঝে জলবায়ুর এমন আচরণে চিন্তিত সরকার। কেননা, আমলের ফলন কম হলে ঝুঁকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখনও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়াতে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। ধান গাছ বড় হচ্ছে না। মাটিও ফেটে যায়।

শুধু আমনের মৌসুম নয় জলবায়ুর বিরুপ আচরণে ফসল উৎপাদনে সংকটে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা। কোথায়ও লবণাক্ততা, কোথায়ও খরা, হঠাৎ বন্যা ও দূর্যোগে সংকটে চট্টগ্রামের অনেক কৃষক-চাষীরা। তবে প্রকৃতির সাথে লড়াইয়ে হারতে চায় না কৃষকরা। তারা ঝুঁকছেন জলবায়ু সহিষ্ণু নানা জাতের ফসল উৎপাদনে। চন্দনাইশে আগে মাঠের পর মাঠ ধান চাষ হতো। এখন সেখানে পেপে, সবজিসহ লাভজনক ও দ্রুত ফলন হয় এমন শস্য আবাদ করছে চাষীরা। চট্টগ্রামের চন্দনাইশের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, কৃষকরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষ করছে। এতে কম সময়ের মধ্যেই ফলস তুলে ফেলা সম্ভব হয়।

ফটিকছড়ির দাতঁমারা গ্রামের পাহাড়ী জমি এক সময় অনাবাদি ছিল। এখন সেখানে প্রায় প্রতি ঘরে ঘরেই মাল্টা চাষে ঝুঁকেছে কৃষকরা। ফটিকছড়ির উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মানুষ এখন লাভজনক কৃষির দিকে নজর দিচ্ছে। করোনার পর এই প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। বাজার বুঝে মানুষ চাষাবাদ করছে।

জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চাষের ধরনও পাল্টাচ্ছে। বৃষ্টির উপর নির্ভর না করে চন্দনাইশের কৃষকরা আর্টিজিয়ান ওয়েলের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পানির আধার ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ছাড়া বিনা পয়সায় সেচের পানি পাচ্ছে তারা। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী আজমানুর রহমান জানান, সেখানে জ্বালানি ছাড়াই সেচের পানি পাওয়া যাচ্ছে। তাই খরচও নেই।

প্রযুক্তিগত সহায়তা ও জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল উপকূলের ৩০ জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে সহায়তা করছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিপিডি সৈয়দ আবু সিয়াম জুলকারনাইন বলেন, ৩০টি উপজেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেখানে আমরা ধানের বিকল্প হিসেবে উচ্চমূল্যের ফসল আবাদের ব্যাপারে উৎসাহিত করছি।

ইফাদ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্নো হ্যামেলিয়ার্স বলেন, আমাদের সত্যিকার অর্থে যে জিনিসগুলোর ব্যাপারে কাজ করতে হবে তার মধ্যে একটি হলো খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার বৈচিত্র‍্য আনা। খাদ্য ব্যবস্থায় আমাদের আরও বিনিয়োগ করতে হবে। খাদ্য়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইলে এটি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত।

কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংকট বিবেচনা করে সরকার বসে নেই। জলবায়ু সহিষ্ণু নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবন ও গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এমন জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলো ১০-১৫ দিন পানির নিচে ডুবে থাকলেও গাছটা পচে যাবে না। এছাড়া আমাদের বিজ্ঞানীরা গম ও ভুট্টার এমন জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলো লবণাক্ত এলাকাতেও চাষাবাদ করা সম্ভব।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply