পাওনা টাকা চাওয়ায় নারীকে ঘুষি, গণধোলাই থেকে বাঁচতে ডোবায় ঝাঁপ দিয়েও হলো না শেষরক্ষা

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, কুড়িগ্রাম:

পাওনা টাকা চাওয়ায় এক নারীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয় জনতার রোষের মুখে পড়ে শেষপর্যন্ত ডোবার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন তিনি। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। পানি থেকে তুলে গণধোলাই দেয়া হয়েছে তাকে।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের সায়দাবাদ বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে থানায় নিয়ে যাবার কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে ওই নেতাসহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে অভিযোগ উঠেছে, থানায় না নিয়ে পথেই তাদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বগুড়ার এক নারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামালের কাছে ১৫ লাখ টাকা পান বলে দাবি করেন। এ নিয়ে সায়দাবাদ বাজারের আব্দুর রশিদের দোকানে একটি বৈঠক বসে। বৈঠক চলাকালীন হঠাৎ পালানোর চেষ্টা করলে ওই নারী সুরুজ্জামালের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় সুরুজ্জামাল তার মাথায় ঘুষি ও ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করেন। সেখানে ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। নারীর ওপর নির্যাতনের এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয় জনতা ধাওয়া করলে সুরুজ্জামাল পানিতে ঝাঁপ দেন। এ সময় পানি থেকে তুলে এনে আবার তাকে গণধোলাই দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। পরে ৫ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল বিক্ষুদ্ধ জনতার হাত থেকে ওই নেতাকে ছাড়িয়ে নেন।

যাদুরচর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহ কামাল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সুরুজ্জামাল পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাকে আমরা উদ্ধার করি। এ সময় তার পড়নের পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি ছেঁড়া ছিল। পরে স্থানীয়দের
মাধ্যমে জানতে পারি, এক নারীকে ধাক্কা দিয়েছিলেন তিনি। এতে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাওয়া দিলে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। পরে ওই নারীসহ সুরুজ্জামালকে থানায় পাঠানো হয়।

নির্যাতিত নারী লাভলী বেগম বলেন, সুরুজ্জামাল চাচার সাথে আমার পরিচয় হয় ঢাকায়। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বড়ভাই বলে পরিচয় দেন। তাকে ২০১৯ সালে আমার বদলি এবং আমার মামাতো ভাইয়ের চাকুরির জন্য ১৫ লাখ টাকা দেই। কিন্তু তিনি সেই টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে দিনের পর দিন ঘোরাচ্ছেন।

এ পর্যন্ত তার কাছে আমি ৭/৮ বার টাকা ফেরত নেয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু তিনি শুধু তালবাহনা করেন টাকা না দিয়ে। শুক্রবার রাতে তাকে সায়দাবাদ বাজারে দেখা পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমার গায়ে হাত তোলেন। এসময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাওয়া করে।

এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তছির এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন এ বিষয়ে ওসি স্যারের সাথে কথা বললে তিনি সব বলবেন। আর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপ কুমার সরকার বলেন, এমন ঘটনা
শুনেছি। তবে এই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

উল্লেখ্য, আদালতের আদেশের তোয়াক্কা না করে ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখা, কর্তিমারী বাজারে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখল, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে মারামারি, ট্রাফিক পুলিশের ওপড় চড়াও হওয়াসহ তার চাকরি খাওয়ার হুমকি, অসহায় পরিবারের ওপর নির্যাতনসহ জোর করে দুইটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে ভুরিভোজ, পল্লী বিদ্যুতের বিল না দিতে এলাকায় মাইকিং করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের এই নেতার বিরুদ্ধে। সুরুজ্জামাল মিয়া নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বড় কথিত ভাই পরিচয়ে নানা অপকর্ম করলেও ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply