শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে প্রায় দুই দশক ধরে আধিপত্য দেখিয়ে এসেছে রাজাপাকসে পরিবার। রাজাপাকসে নামটি কয়েক মাস ধরেই আলোচিত দেশটির ঘরে-বাইরে। গতকাল রোববার রাতে দুবাইয়ে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপ জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ৪৫ বলে ৭১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কাকে শিরোপা জেতানোর নায়ক রাজাপাকসে পদবীধারী এক ক্রিকেটার ভানুকা রাজাপাকসে।
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই রাজাপাকসে কি শ্রীলঙ্কার বহুল আলোচিত–সমালোচিত রাজাপাকসে পরিবারের কোনো সদস্য নাকি সেই পরিবারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে এই রাজাপাকসের?
ভানুকা রাজাপাকসে এশিয়া কাপের শিরোপা শ্রীলঙ্কার জনসাধারণকে উৎসর্গ করেছেন। ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটারের এশিয়া কাপে খেলারই কথা ছিল না। বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভানুকা। সিদ্ধান্ত জানিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি। চিঠিতে পরিবারকে সময় দেয়ার কথা বললেও মূল কারণটা ক্রিকেটীয়।
গত বছর ফিটনেসে উন্নতি আনতে শ্রীলঙ্কার কোচ মিকি আর্থার খেলোয়াড়দের বেশ কিছু নতুন মানদণ্ড বেধে দিয়েছিলেন। ওজন কমানো ও ফিল্ডিংয়ে তৎপরতার মানদণ্ডে ব্যর্থ হন ভানুকা রাজাপক্ষে। একপর্যায়ে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার সমালোচনা করায় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানাও দিতে হয় তাকে।
চলতি বছরের শুরুতে বোর্ডকে অবসরের চিঠি দেয়ার পর তাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী নমল রাজাপাকসে। নমলের আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছেলে। নমল কথা বলেন মূলত ভানুকাকে অবসরের থেকে ফেরাতে। শেষ পর্যন্ত সফল হন। অবসরের চিঠি প্রত্যাহার করেন ভানুকা। তবে এই অংশটুকু পড়ে যদি আপনি মনে করে থাকেন, ভানুকা রাজাপাকসে মাহিন্দা রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ, তাহলে ভুল হবে।
গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে শ্রীলঙ্কাজুড়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বড় হতে থাকে, সরকারও শক্তভাবে দমন চালানোর চেষ্টা করে, তখন ক্রিকেটমহলের যারা মুখ খুলেছিলেন, ভানুকা রাজাপাকসে তাদেরই একজন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। ২০১৯ সালেও যে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার, সেই দেশটিকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের জন্য হাত পাততে হয়েছে আইএমএফের কাছে। খাদ্য, জ্বালানিসংকট আর উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বিপর্যস্ত সময় পার করছে শ্রীলঙ্কার জনগণ। এর জেরে ইতোমধ্যে ক্ষমতা থেকে বিদায় ঘটেছে রাজাপাকসে পরিবারের। অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে আয়োজক হয়েও এ বছরের এশিয়া কাপ নিজেদের মাটিতে আয়োজন করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
ইউএইচ/
Leave a reply