কুষ্টিয়ায় দুই মাদরাসা ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, অবশেষে মামলা দায়ের

|

ফাইল ছবি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাসা ভাড়া নিয়ে চলা ক্বওমী মাদরাসায় ১১ ও ১২ বছর বয়সী দুই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে বাড়ি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি বাড়িওয়ালা হাজী মো. শহিদুল ইসলাম (৭২) গত বুধবার থেকেই পলাতক রয়েছেন। অভিযুক্ত উপজেলা সাব-রেজিট্রি কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ট্যাক্স কালেক্টর ও দুই সন্তানের জনক বলে জানা গেছে।

গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা জানাজানির পর থেকে ওই এলাকার প্রভাবশালীদের একটি গ্রুপ মীমাংসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীর বাবা শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার বাদী ঘটনার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন বলে জানা গেছে।

এলাকা সূত্রে জানা গেছে, সাত মাস আগে ফয়জুল উলুম ক্বওমী মহিলা মাদরাসাটি স্থানান্তরিত হয় কুমারখালী পৌর এলাকার দুর্গাপুর এলাকার হাজী মো.শহিদুল ইসলামের বাড়িতে।

মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আকামউদ্দিন (আকাই) বলেন, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে মাদরাসার জন্য তার বাসাটি নেয়া হয়। বিভিন্ন শ্রেণির ৩৩ জন ছাত্রী ও ৩ জন শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন এ মাদরাসায়। বাড়ির একটি ঘরে বাড়ি মালিক ও তার স্ত্রী থাকেন। মোবাইল চার্জ দিতে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ওই ঘরে যায়। সেই সুযোগে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রায় মাসখানেক আগে প্রথমে যৌন নিপীড়ন করেন বাড়ির মালিক হাজী মো. শহিদুল ইসলাম। এরপর থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীকে নিয়মিত যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন তিনি।

আকামউদ্দিন আরও বলেন, আমরা কিছুদিন আগে জানতে পারি যে, ছাত্রীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নিপীড়ন করেছেন ওই বাড়ির মালিক। তাদের সাথে খুব খারাপ কাজ করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিকের সাথে বসি আমরা। কিন্তু কোনো সমাধান করতে পারিনি।

গত বুধবার হিফজ পড়ুয়া আরেক ছাত্রী মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে শহিদুলের অপকর্ম দেখে ফেলেন। ওই ছাত্রী বলেন, শহিদুল দাদু আমাকে ২৩০ টাকা দিয়ে কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করেন। টাকা না নিতে চাইলে হত্যার হুমকি দিয়ে আমাকেও জোরপূর্বক নির্যাতন করেন তিনি।

অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম ফোনে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি ২০১৯ সালে হজ করেছি। এমন কাজ আমি করতেই পারিনা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালী একটি মহল থানায় অভিযোগ না করতে দিয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তাদের কারণেই চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হচ্ছিলো না বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলমকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির সাথে কথা বলেন এবং মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। সেই সাথে পুলিশ সুপার ঘটনাটির সর্বশেষ আপডেট এবং মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুল ইসলামকে কুমারখালী থানায় পাঠান।

কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক ছাত্রীর বাবা থানায় নারী ও নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। আসামি এখনও পলাতক রয়েছে বলে জানান তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply